
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি এবং তার সঙ্গে মানুষের রীতিনীতি এবং জীবনযাত্রার যেভাবে তার নিজের রূপ পরিবর্তন করে তারই নিদর্শন পাবেন মোটরসাইকেল ডায়েরির এই পর্বের এবং আগামী বেশ কিছু পর্বে। শীতকালে আমরা বেশ কিছু পাহাড় এবং মালভূমি অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছি, তাই চলুন বসন্তের শুরুতে আমরা হারিয়ে যাই প্রকৃতি এবং তার রূপের মাদকতায়। যেখানে আপনি পাবেন লালমাটি, সবুজ পাহাড় আর পলাশের বন। প্রকৃতি যেন বসন্তকে তার নিজের রং ও রূপ দিয়ে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আর এই নিমন্ত্রণে চলুন শামিল হয়ে এই পুরো মার্চ মাস ধরে চলুন ঘুরে আসি পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ার বেশ কিছু স্থানে। এই সুন্দর প্রকৃতির সঙ্গে রয়েছেনমানুষেরও নানা উৎসব। আর আঞ্চলিক উৎসবে মেতে নিজের বাইককে ভাল করে সার্ভিসিং করে চলুন বেরিয়ে আসা যাক বেশ কিছু অফবিট স্থান থেকে।
মোটরসাইকেল ডায়েরির একটি পর্বে আমি মুরগুমা লেক, ময়ূর পাহাড়, মারবেল লেক, অযোধ্যা পাহাড় এবং অরণ্য সংরক্ষণ এরিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। তাই চলুন এই পর্বে প্রকৃতির রূপ অন্বেষণে আর পলাশের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে পুরুলিয়ার এই অংশে, যেখানে শুশুনিয়া এবং জয়চন্ডী পাহাড়ের বেশ কিছু অঞ্চল রয়েছে। তাই চলুন আর সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়ি আজকের দিনের প্রথম গন্তব্য স্থান গাংদুয়া ড্যামের উদ্দেশ্যে যেটি শালী ওয়াটার রিজার্ভ নামে পরিচিত।
চলুন মোটরসাইকেলে লাগেজ বেঁধে নিয়ে (কীভাবে প্যাকিং করবেন তার বিস্তারিত বিবরণ আছে মোটরসাইকেল ডায়েরির ১২ নম্বর পর্বে) কিছু শুকনো খাবার, কিছু এনার্জি বার, কিছু সাধারণ ওষুধ, আর আপনার অতিপ্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী মধ্যে বাইকের পাংচার কীট এবং হাওয়া দেওয়ার মেশিন নিতে ভুলবেন না। পুরুলিয়ার বেশ কিছু রাস্তা এখনও ভাল নয় আর জঙ্গল এবং পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার ফলে গাছের কাঁটায় পাংচার হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আর এক লিটারের জলের বোতল ও ক্যামেরা। এসব গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন কলকাতা থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে গাংদুয়া ড্যাম এর উদ্দেশ্যে। এনএইচ টু ধরে বর্ধমান, পানাগর, রাজবাঁধ ক্রস করে বাঁদিক নিয়ে দামোদর নদ ক্রস করে চলে আসুন এই জলধারায়। কলকাতা থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার, এই জায়গায় আসতে আপনার প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাবে।
এই ডেমটি বেশ সুন্দর। দূরে ছোট পাহাড়ের নিচে চারপাশে সবুজ জঙ্গলের মাঝে একটি বিশাল ড্যাম। জলাধারের একপাশে ইকোপার্ক, যেখানে ফুটে উঠেছে নানা ধরনের ফুলের বাহার। আর অন্যদিকে পলাশের বন। সবুজ প্রকৃতির মাঝে লালের আভা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। এই সুন্দর প্রকৃতিকে ক্যামেরাবন্দি করে চলে আসুন একটি ছোট্ট পাহাড়ের উপর, যেখান থেকে দেখতে পারবেন পুরো প্রকৃতির ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই নাচন চন্ডি পাহাড়। পাহাড়ে ওঠার জন্য রয়েছে সুন্দর সিমেন্টের তৈরি সিঁড়ি। এই পাহাড়ের উপরে পাবেন মহাদেব এবং মায়ের মন্দির। এই মায়ের মন্দিরের টেরাকোটার মূর্তি সত্যিই অসাধারণ।
এর পরের গন্তব্য স্থান শুশুনিয়া পাহাড়। যা নাচন চণ্ডী পাহাড় থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জয়চন্ডী পাহাড় এর রাস্তাটি খুব সুন্দর লাল মাটির রাস্তা দুপাশে পাহাড় এক অসাধারণ প্রকৃতি। শুশুনিয়া পাহাড়ে আপনি দেখতে পাবেন শুশুনিয়া পাহাড়ের নেচার ক্যাম্প, ভিউ পয়েন্ট, রক্লাইমিং স্পট, ইকো ট্যুরিজম পার্ক যেখানে আপনি রাত কাটাতেও পারেন। খুব সুন্দর পাহাড়ের নিচে একাধিক হোমস্টে।
এরপর আপনি চলে আসুন ৩৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আজকের দিনের শেষ এবং রাত্রি নিবাসের স্থান বড়ন্তিতে। এই দূরত্ব আসতে আপনার মোটামুটি এক ঘন্টা সময় লেগে যাবে, রাস্তাটি বেশ ভালো। রাস্তার পাশে পলাশের বন আপনকে আলাদাভাবে এনার্জি প্রদান করবে।
বড়ন্তির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় অবর্ণনীয়। এখানে না আসলে বোঝাই যায় না পুরুলিয়ার মধ্যে একটি পাহাড়ে ঘেরা জলধারা এবং চারপাশে গভীর জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত একটি সুন্দর গ্রাম। বড়ন্তি এখন নতুনভাবে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে ইকো ট্যুরিজম এবং নানা ধরনের ভিউ পয়েন্ট যেমন সানসেট ভিউ পয়েন্ট আর পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি ড্যামে পড়ে এক অবর্ণনীয় রূপ ধারণ করে। যা দেখার জন্য আপনি বারবার আসবেন। এখানে মুরাদ্দি হিল ভোরবেলা ঘুরে বেড়ানোর জন্য আদর্শ স্থান। কুয়াশা ঢাকা পাহাড়ে আপনি শুনতে পারবেন নানা পাখির ডাক আর গ্রাম্য মানুষের কাজকর্ম।
এছাড়াও পরের দিন ঘুরে বেড়ানো জায়গা গুলি হল যথাক্রমে ভেটি পলাশ বন, বড়ন্তি ফরেস্ট, মানপুর পলাশ বন, রামচন্দ্রপুর ড্যাম।।
বসন্তের পুরুলিয়ার পরবর্তী অংশ আগামী সপ্তাহে………