
বাজার থেকে সবজি কিনে আনলেই শুধু হয় না, সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় বাজার থেকে কেনা সবজি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে রেফ্রিজারেটরে রাখআ হয়। শুধু ভারতীয়দের বাড়িতেই নয়, কমবেশি সকলের বাড়িতেই এমনটা করা হয়। তবে এই অভ্যাস আপনারও থাকলে দ্রুত ছাড়ুন। নইলে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। কারণ, সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, প্লাস্টিকের ব্যাগে বা পাত্রে রাখা জিনিসপত্র যে কারও স্বাস্থ্যের বিরাট ক্ষতি করে। চলুন জেনে নিন এই বিষয়ে গবেষণা আর কী কী বলছে।
এনপিজে সায়েন্স অফ ফুড জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, কাচ ও প্লাস্টিকের পাত্রের ঢাকনা বারবার খোলা হলে ও বন্ধ করলে কীভাবে এতে উপস্থিত মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিক কণা নির্গত হয় এবং যা সেখানে থাকা খাদ্য বা পানীয়তে দ্রবীভূত হয়।
খাদ্যপণ্য নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ফুড প্যাকেজিং ফোরামের সায়েন্টিফিক কমিউনিকেশন অফিসার বলেছেন, “গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রতিবার বোতল খোলার সময় মাইক্রোপ্লাস্টিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, যতবার আপনি বোতল খুলবেন, ততবার মাইক্রো এবং ন্যানোপ্লাস্টিক নির্গত হবে। গবেষণা অনুসারে, এখন পর্যন্ত বিয়ার, টিনজাত মাছ, ভাত, মিনারেল ওয়াটার, টি ব্যাগ, লবণ, টেকওয়ে খাবার এবং কোমল পানীয়তে মাইক্রো এবং ন্যানোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গিয়েছে।”
মাইক্রোপ্লাস্টিক কি?
এগুলো ছোট প্লাস্টিকের কণা। যা দৃশ্যমান নয়। প্লাস্টিক ভাঙলে এগুলো তৈরি হয়। কখনও কখনও এর আকার একটু বড়ও হতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি প্রত্যেক প্লাস্টিকের জিনিসপত্রে পাওয়া যায়। আজকাল যত দিন যাচ্ছে নানা খাদ্যদ্রব্যেও পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এটিও প্রকাশিত হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে যে মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন আমাদের খাবারকে কীভাবে দূষিত করছে, যা স্বাস্থ্যের উপরও খারাপ প্রভাব ফেলছে।
প্লাস্টিকের ব্যাগে খাবার রাখা কতটা বিপজ্জনক?
আজকাল, প্রায় সবকিছুতেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। তা সে খাবার, পানীয় বা বাসনপত্র হোক। এমন পরিস্থিতিতে, আমাদের খাবার, পানীয় এবং রান্নাঘরে মাইক্রোপ্লাস্টিক দ্রুত মিশে যাচ্ছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলছে। এই কণাগুলি এত ছোট যে একজন ব্যক্তির টিস্যুতে সহজেই শোষিত হতে পারে এবং রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, পরীক্ষা করা প্যাকেজজাত খাবারে ৯৬% পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরের উপর মারাত্মক খারাপ প্রভাব ফেলে
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন মানুষের রক্ত, ফুসফুস এমনকি মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়ছে। যে কেউ শুনলে অবাক হবেন, একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৮০% মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক মিলেছে। এর অর্থ হল বেশিরভাগ মানুষ এখনও এতে আক্রান্ত হচ্ছেন। একইসঙ্গে এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়েছে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রায় ৫৮% মানুষের ধমনীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক মিলেছে।
হার্ভার্ডের গবেষকরা মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সম্পর্কেও বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে শরীরে প্রদাহ হয়। যা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়। শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন হৃদরোগ, অটোইমিউন রোগ এমনকি ক্যানসার।
প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার না করে সবজি সংরক্ষণ কীভাবে করবেন?
প্লাস্টিকের ব্যাগে শাকসবজি বা অন্যান্য জিনিস সংরক্ষণের পরিবর্তে, অন্য পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারেন। এর জন্য জালের ব্যাগ (জালি জালি ব্যাগ), স্টিলের বাসনপত্র বা ভালো উপকরণ দিয়ে তৈরি ঝুড়ি ব্যবহার করতে পারেন। তবে, সবচেয়ে ভালো হয় যদি কেউ নিজের প্রয়োজন মতো শাকসবজি বা ফল কেনেন। আর কেনাকাটা করার সময়ও নিজের সঙ্গে কাপড় বা জালের ব্যাগ রাখা ভালো।