
আজকের ফিল্টার, ফটো এডিটিং অ্যাপ আর নিখুঁত সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলের যুগে অনলাইন ডেটিংয়ে সত্যিকারের নিজেকে তুলে ধরা অনেকটাই দুর্লভ হয়ে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে যেন ফিকে হয়ে যায় আমাদের রোজের সম্পর্কগুলো। সোশ্যাল মিডিয়ায় চটক দেখে প্রেম শুরু করলেও কমে আসছে তার স্থায়ীত্ত। তাই নিজের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে তুলতে নতুন পথে হাঁটছে জেনারেশন জেড। ভরসা রাখছে রিভার্স ক্যাটফিশিং-এর উপর। বিষয়টা কী?
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যেখানে নিজেকে আকর্ষণীয় এবং সুন্দর করে তোলাটাই ট্রেন্ড, সেখানে একদম উলটো পথে হাঁটছেন Gen-Z। ইচ্ছে নিজের সমাজমাধ্যমে বা ডেটিং সাইটে এমন ছবি দিয়ে রাখছে যাতে তাঁদের দেখতে খারাপ লাগে। মুখে বলিরেখা, টোনড বডির ছবি। হয়তো বাস্তবে সে অতটা খারাপ নয়, কিন্তু সমাজমাধ্যমে নিজের এমন লুক প্রকাশ পাচ্ছে। যাতে তারা এমন কাউকে খুঁজে পান যে শুধু রূপে নয়, বরং ব্যক্তিত্ব গুণ দেখে এগিয়ে আসবেন।
নিখুঁত সেলফি, দামি পোশাক বা জিমের ঝকঝকে ছবির বদলে অনেকে নিজেদের বাস্তব, খোলামেলা ও মাঝেমধ্যে অদ্ভুত ছবিই তুলে ধরেন। যেমন – এলোমেলো চুল, মেকআপ ছাড়া ত্বক বা একেবারে সাধারণ দৈনন্দিন মুহূর্ত। বায়োগ্রাফিগুলো হয় সৎ, কখনও একটু আত্ম-বিদ্রুপমিশ্রিত, আর একেবারে খোলামেলা। উদ্দেশ্য একটাই—যারা শুধুই বাহ্যিক সৌন্দর্যের পেছনে ছুটছে, তাদের বাদ দিয়ে এমন কাউকে খুঁজে বের করা, যিনি মনের মানুষ হতে পারেন।
TikTok-এর মতো প্ল্যাটফর্মে এই বর্তমানে বেশ ট্রেন্ডিং। অনেকেই তাঁদের রিভার্স ক্যাটফিশিং-এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। জানাচ্ছেন কীভাবে এটা তাদের আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। কেউ কেউ এটাকে একটা ‘টেস্ট’ বলেও মনে করেন। যদি কেউ আপনার সাধারণ ছবি দেখেও আগ্রহী হন, তাহলে হয়তো তারা আপনার আসল মানুষটাকেই পছন্দ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ট্রেন্ড আসলে বর্তমান প্রেম-সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত। বহু বছর নিখুঁত অনলাইন ইমেজের দুনিয়ায় কাটানোর পর, Gen Z এখন চায় খোলামেলা সম্পর্ক, মানসিক নিরাপত্তা আর সত্যিকারের সংযোগ।
তবে এ নিয়ে বিতর্কও আছে। কেউ কেউ মনে করেন, নিজেকে ইচ্ছে করে কম আকর্ষণীয় দেখানোও এক ধরনের প্রতারণা। কারও মতে এটা এক ধরনের আত্ম-প্রতিবাদ। বাহ্যিক সৌন্দর্যের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা।