
মিঃ পারফেকশনিস্ট বললেই যার কথা আমাদের মনে পড়ে তিনি হলেন আমির খান। তিনি যাই করেন তাই যেন পারফেক্ট হয়। তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ আসমুদ্রহিমাচল। সেটা ‘তারে জামিন পর’ হোক বা ‘পিকে’। তেমনই আরেকটি সিনেমা হল ‘দঙ্গল’। এই সিনেমাতে আমিরের অভিনয় তো বটেই, তার সঙ্গে একই ভাবে নজর কেড়েছিল অভিনেতার বডি ট্রান্সফরমেশন।
একবার তরুণ বয়সের পেশিবহুল পালোয়ান চেহারা। আবার ইয়াবড় ভুঁরি সমেত বয়স্ক আমির। আমির নিজেই জানিয়েছিলেন তিনি প্রথমে নিজের ওজন বাড়িয়ে শুট করেন। পরে সেই ওজন ঝরিয়ে আবার ফিরে আসেন ফিটফাট চেহারায়।
৬০ বছর বয়সি আমির অভিনয় করেছিলেন ভারতীয় কুস্তিগীর মহাবীর সিং ফোগাট-এর ভূমিকায়। সেই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে এক অবিশ্বাস্য শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যান আমির। প্রথমে প্রায় ২৫ কেজি ওজন বাড়ান, তারপর আবার সেটি কমিয়ে ফেলেন।
এক সাক্ষাৎকারে আমির জানিয়েছিলেন তিনি নিজেই পরিচালক নীতেশ তিওয়ারির কাছে অনুরোধ করেন, যেন প্রথমেই পিতা মহাবীরের অংশগুলোর শ্যুটিং করা হয়। এত শ্যুটিংয়ের সময় যত এগোবে, ধীরে ধীরে ফিট হয়ে উঠতে পারবেন। তিনি বডি স্যুট পরে মোটা দেখাতে চাননি। বাস্তবে ওজন বাড়িয়েছিলেন।
আমির বলেন, “ওজন বাড়ানোর সময়টা বেশ মজার ছিল। যা ইচ্ছা খেতাম, বেশ মজা করতাম। কিন্তু শরীরের পক্ষে খুব অস্বস্তিকর ছিল। আমার কুস্তির ট্রেনিং-এ প্রভাব পড়েছিল। শরীরে এত ভার ছিল যে তাড়াতাড়ি নড়াচড়া করতে পারতাম না। শরীরের ওজন বাড়লে বদলে যায় শ্বাসপ্রশ্বাস , হাঁটার ভঙ্গি, বসার ধরন—সবই।”
কীভাবে ওজন কমান আমির?
ওজন আমির দাঁড়িয়েছিলেন প্রায় ৯৭ কেজিতে। সে সময়ে শরীরের চর্বির পরিমাণ ছিল ৩৮%। সেখান থেকে তিনি প্রায় ২৫ কেজি ওজন কমান, এবং চর্বির পরিমাণ নামিয়ে আনেন ৯.৬%-এ।
আমির বলেন, “প্রথমে ভাবতাম হয়তো পারব না। কিন্তু আমি নিজেকে হতাশ হতে দিইনি। প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়েছি, ফলাফল নিয়ে বেশি চিন্তা করিনি।”
ওজন কমাতে তিনি এক কঠোর ফিটনেস রুটিন অনুসরণ করেন। এতে ছিল স্ট্রেন্থ ট্রেনিং, ফাংশনাল ওয়ার্কআউট, কার্ডিও এবং ক্যালোরি-ডেফিসিট ডায়েট।
আমির বলেন, “ডায়েট হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডায়েট ঠিক না হয়, তাহলে আপনি যতই এক্সারসাইজ করুন, কোনও ফল পাবেন না।”
তাঁর ট্রেনাররা জানান, অনেক সময় আমির ক্লান্ত হয়ে ওয়ার্কআউট থামাতে চাইতেন, নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ করতেন। কিন্তু ট্রেনাররা তাঁর জন্য ওয়ার্কআউট সহজ করে দেননি বা ওজন কমাননি। বরং সেটাই তাঁকে চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি আমিরের এই অটল নিষ্ঠাকে প্রশংসা করেন। সিনেমার শ্যুটিং শেষ হওয়ার সময় আমির নিজেও তাঁর রূপান্তর দেখে গর্ব বোধ করেন। তিনি বলেন, “একবার শুরু করলে ধীরে ধীরে আপনি দেখবেন আপনার শরীর বদলে যাচ্ছে।”