AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পদবীর ইতিহাস: নতুন আইন তৈরি করতে ওস্তাদ বসুরা! কী ভাবে এল এই পদবী?

Basu Surname: বসু পদবী কোথা থেকে এল তার ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু মত রয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় বসু পদবীর সাধারণত হিন্দু সম্ভ্রান্ত বাঙালিদের মধ্যে বিদ্যমান। ভাষাবিদরা বলছেন সংস্কৃত বাসু থেকে উৎপত্তি হয়েছে এই পদবীর।

পদবীর ইতিহাস: নতুন আইন তৈরি করতে ওস্তাদ বসুরা! কী ভাবে এল এই পদবী?
| Updated on: Apr 26, 2025 | 6:19 PM
Share

বাঙালির সঙ্গে বসু পদবীর একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু হোক বা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু বা অন্য কেউ। বিশেষ করে বাংলার রাজনীতিতে এই পদবী বরাবরই বড় প্রাসঙ্গিক। সব সময় ক্ষমতার অলিন্দে এক-দু’জন বসুকে খুঁজে পাওয়া যায়ই। আবার আমাদের আশেপাশেও বসুর পদবীর লোকের ছড়াছড়ি। প্রশ্ন হল বসু পদবী এল কোথা থেকে?

বসু পদবী কোথা থেকে এল তার ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু মত রয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় বসু পদবীর সাধারণত হিন্দু সম্ভ্রান্ত বাঙালিদের মধ্যে বিদ্যমান। ভাষাবিদরা বলছেন সংস্কৃত বাসু থেকে উৎপত্তি হয়েছে এই পদবীর। এটি ভগবান বিষ্ণুর একটি নাম। যার অর্থ সবের মধ্যেই বসবাস। অনেকে আবার একে মহাদেব বা শিবেরও এক নাম বলে উল্লেখ করেছেন। বসু শব্দের সঙ্গে সম্পদ, রত্ন, বৈভবেরও যোগ রয়েছে। মূলত কায়স্থদের মধ্যেই এই পদবী দেখতে পাওয়া যায়।

বসুরা সকলেই প্রায় কুলীন কায়স্থ এবং গৌতম গোত্রের। প্রচলিত, মকরন্দ ঘোষ, দশরথ বসু, কালীদাস মিত্র, পুরুষোত্তম দত্ত ও দশরথ গুহ নামে পাঁচ কায়স্থ কনৌজ থেকে এসেছিলেন এই বঙ্গ দেশে। বঙ্গীয় কায়স্থ সমাজে রয়েছে ৬ ভাগ। দক্ষিণ রাঢ়ী , বঙ্গজ, উত্তর রাঢ়ী , বারেন্দ্র, মধ্যশ্রেণী এবং সিলেটী।

বসু পদবী কেবল দক্ষিণ রাঢ়ী ও বঙ্গজদের মধ্যে পাওয়া যায়। এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘোষ, বসু, মিত্র ও গুহ পদবী পাওয়া যায়। মনে করা হয় এদের মধ্যে দশরথ বসুর নাম থেকেই এসেছে বসু পদবী।

দশরথ বসুর পুত্র কৃষ্ণ বসু। তার নাতি হংস বসুর চার পুত্র। তাঁদের মধ্যে মুক্তি বসু প্রতিষ্ঠা করেন মহিনগর সমাজ এবং শুক্তি বসু প্রতিষ্ঠা করেন বাগাণ্ডা সমাজ। মহিনগর সমাজে জন্ম হয় গোপীনাথ বসুর। যিনি পরবর্তীতে বসুদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এক বড় দায়িত্ব পালন করেন। গোপীনাথ বসু এককালে ছিলেন নবাবের সেনাপতি। হয়েছিলেন দক্ষিণ রাঢ়ী সমাজের সমাজপতি। সমাজ সংস্কারের কাজ হয়েছিল তাঁর হাতেই।

একটা সময় নিয়ম ছিল কুলীনরা কেবল অন্য কুলীনকেই বিয়ে করতে পারবেন। গোপীনাথ বসুর আমলে কুলীনদের মধ্যে পুরন্দরী প্রথা মেনে চলা শুরু হয়। এই প্রথা অনুসার কেবল পরিবারের জেষ্ঠ্য পুত্রকে কুলীন পরিবারে বিয়ে করাটা বাধ্যতামূলক। বাকিরা মৌলিক কন্যাকেও বিয়ে করতে পারেন। তাতে কুলবভঙ্গ হত না। মৌলিক পুত্রদেরও কুলীন কন্যাকে বিয়ের রীতি চালু হয়।

এদিকে কুলীন পরিবারে বিয়ে করে জাতে ওঠার হিড়িক পড়ে যায় মৌলিক পরিবারে। অন্যদিকে জাতে ওঠার জন্য মোটা অঙ্কের কুলমর্যাদা দিত হত মৌলিক পরিবারকে। যা অধিবাস বলেও পরিচিত ছিল। মানে মোটা টাকা যৌতুক দিতে হত। গোপীনাথ বসুর আমলেই দক্ষিণ রাঢ়ী কুলীন কায়স্থরা বল্লালী প্রথার পরিবর্তে পুরন্দরী প্রথা ব্যবহার শুরু করেন। এইভাবেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও লাভবান হন বসুরা।

এতো গেল একটা মত। রয়েছে ভিন্ন ধারণা। খগেন্দ্রনাথ ভৌমিকের পদবীর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস বইতে উল্লিখিত আছে এক অন্য তথ্য। বিশ্বাবসু, পৃথিবসু জাতীয় নাম থেকেই এসেছে এই পদবী। গ্রামের নাম থেকেও এই পদবী এসে থাকতে পারে। মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামের এক নাম ছিল ‘বসু’। বর্তমানে নাম হয়েছে ‘বসুয়া’। সেখান থেকে বসুয়ারী হয়ে এই বসু পদবী এসে থাকতে পারে।

বসু আর বোস কি এক?

ইংরেজরা এদেশে শাসন করতে এলেও ভাষাটা খুব একটা ভাল করে শিখে উঠতে পারেনি। সাহেবদের উচ্চারণে থাকত একটা পশ্চিমী টান। যা পরবর্তীতে একটা ফ্যাশন হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন রায় থেকে রয়। চন্দ্র থেকে চন্দ। সেভাবেই বসু হয়ে ওঠে বোস।