
আমাদের চারপাশে সমাজে এমন বহু ব্যক্তি আছেন যাঁদের পদবী মৈত্র। যাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার সমাজে বেশ সুপ্রতিষ্ঠিত এবং প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু এই পদবীর উৎপত্তি কী ভাবে? মৈত্ররা আসলে কারা? জানেন সেই ইতিহাস?
পদবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মৈত্র মূলত বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের পদবী। বঙ্গদেশে আজ থেকে অন্তত ১৭০০ বছর আগে গুপ্ত যুগে ছিল এই ব্রাহ্মণদের বাস। বারেন্দ্র অঞ্চলে বা উত্তরবঙ্গে ছিল তাঁদের বসবাস। যদিও সেই সময় মূলত বৌদ্ধ এবং জৈনদের প্রভাব থাকায় বাংলার রাজনীতিতে এঁদের খুব একটা ভূমিকা ছিল না। মনে করা হয় মৈত্র পদবী মূলত গাঁয়ী পদবী। অর্থাৎ কোনও একটি গ্রামের নাম অনুসারে পরবর্তী কালে জন্ম হয় এই পদবীর। কেবল মৈত্র নয় স্যানাল, ভাদুড়ী, বাগচী, লাহিড়ী ইত্যাদি বেশিরভাগ বারেন্দ্রী পদবীই আসলে গাঁয়ী।
রাজা বল্লাল সেনের সময় এই বারেন্দ্রী ব্রাহ্মণদের বেশিরভাগ কুলীন সমাজে উর্ত্তীর্ণ হয়। যার মধ্যে ছিল মৈত্ররাও। সকল ব্রাহ্মণ মৈত্রদেরই গোত্র কাশ্যপ।
ব্রাহ্মণ ছাড়াও নমঃশুদ্রদের মধ্যেও মৈত্র পদবী দেখা যায়। নমঃশুদ্রদের মধ্যে ভাদুড়ী, বাগচীও বিরল নয়। যেহেতু সকল নমঃশুদ্রদের গোত্রই কাশ্যপ, তাই নমঃশুদ্র মৈত্ররাও কাশ্যপ। ব্রাহ্মণ মৈত্র এবং নমঃশুদ্র মৈত্রদের গোত্র দিয়ে পৃথক করা সম্ভব নয়।
এই বারেন্দ্র শব্দের উৎপত্তি মনে করা হয় বারোজন ইন্দ্র (রাজা) কিংবা বারিন্দ (প্রাচীন পলি ও লাল মাটি গঠিত অঞ্চল যা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের থেকে কিছুটা উঁচু) শব্দ থেকে এসেছে। মধ্য যুগে গোটা বরেন্দ্র ভূমি জুড়ে বিশাল বিশাল অগভীর ঝিল বা হাওড় জাতীয় জলাভূমি ছিল।
কথিত, আদিশুরের পৌত্র ক্ষিতিশুরের ছাপান্নজন ব্রাহ্মণকে ছাপান্নটি আলাদা গ্রাম থাকার জন্য দান করেছিলেন। যিনি যে গ্রামে থাকতেন, তাঁদের উত্তরপুরুষেরা সেই গ্রামের নামে পরিচিত হন।
মৈত্র পদবী মিত্র সম্বন্ধীয়। মিত্র বা মিত্র সম্বন্ধীয় থেকে এসেছে এই পদবী। এঁদের উপরে বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে।
কাদের সঙ্গে বিয়ে হত?
প্রচলিত নিয়ম অনুসারে মৈত্রদের সঙ্গে সাধারণত কায়স্থ পরিবারের বিয়ে হত। যেমন মিত্র, রায়, দে, পাল ইত্যাদি। কুলীন হও ব্রাহ্মণ হওয়ার আগে অবশ্য এই নিয়ম প্রযোজ্য ছিল না। আগে ব্রাহ্মণদের বিয়ে হত ব্রাহ্মণদের মধ্যেই।