প্রশ্ন- মাত্র কয়েকমাস আগেই বিয়ে হয়েছে আমার বন্ধুর। প্রেম করেই বিয়ে। প্রায় চার বছরের সম্পর্ক ওদের। বিয়ের আগে ওদের মধ্যে যে খুব বেশি ঝামেলা হত এমন কিন্তু নয়। প্রায়শই একসঙ্গে ঘুরতে যায়। রেস্তোরাঁতে খেতে যায়। বিয়ের আগে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে ওর বরের মতের কিছু অমিল হলেও বিয়ের পর অবশ্য সব ঠিক হয়ে যায়। কোনও ঝামেলা ছিল না। তবে আমার বন্ধুর মানসিকতা প্রথম থেকেই একটু অন্যরকম। কোনও ”একটা’ সম্পর্ক নিয়ে ও খুশি থাকতে পারে না। কিছুদিন আগেই আমার বাড়িতে একটি ডিনার পার্টিতে আমন্ত্রিত ছিলেন আমার সহকর্মীরা। আমার বেশ কিছু বন্ধুও ছিল ওদিনের পার্টিতে। এরপর আমার অফিসের এক সহকর্মীর সঙ্গেই আমীর বন্ধুর অন্যরকম একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রথম দিকে আমি ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলেও বন্ধুকে কিছু বলিনি।
আমার অফিসের ওই সহকর্মী বিবাহিত এবং তাঁর এক সন্তানও রয়েছে। কিছুদিন পর আমার আশঙ্কাই সত্যি হল। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড প্রায়শই ওর বরকে মিথ্যে কথা বলে আমার সহকর্মীর সঙ্গে ডেটে যেত। অফিসের কাজের নাম করে বেশ কয়েকবার ট্রিপও করে এসেছে। ওদের এক ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি দেখার পর আমি দুজনকেই অনুরোধ করেছিলাম এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে। ককারণ এতে দুটো পরিবার আর পরিবারের সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোর জীবন একেবারে শেষ হয়ে যাবে। আমার সহকর্মীর ভবিষ্যৎ নিয়েই আমি সবচেয়ে চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু সেদিনের ঝামেলার পর থেকে আমার সহকর্মী আমাকে এড়িয়ে চলছেন, খারাপ ব্যবহার করছেন আমার সঙ্গে। আর আমার বন্ধু জানিয়েছে ওর ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা না বলতে, তাহলে আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখবে না। ওর স্বামী ভীষণই ভাল মানুষ। আমার কি তাঁকে সবটা জানিয়ে দেওয়া উচিত? কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না। – নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বিশেষজ্ঞের উত্তর:
প্রতিটি মানুষের নিজস্ব মূল্যবোধ আর বিশ্বাস রয়েছে। এছাড়াও আত্মসম্মান বোধ থাকাটা জরুরি। কাউকে কখনও বলে-কয়ে নিজের মধ্যে সেই বোধ জাগানো যায় না। আপনার বন্ধু তাঁর স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করছে। কিন্তু আপনি অপরাধ বোধে ভুগছেন। কারণ আপনার সহকর্মী আর বন্ধুর মধ্যেকার যোগসূত্র আপনি নিজেই। তাই নিজেকেই এক্ষেত্রে আপনি দোষী মনে করছেন। প্রথমেই মাথায় রাখুন, বন্ধুর পছন্দের জন্য আপনি দায়ী নন। দ্বিতীয়ত, আপনি তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, এই সম্পর্কের পরিণতি যে ঠিক হচ্ছে না সেই বিষয়ে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আপনার কথায় তাঁরা কেউই পাত্তা দিতে নারাজ। উল্টে বন্ধুত্ব বিচ্ছেদের হুমকি দিয়েছে। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে একেবারেই কথা বন্ধ করে দেওয়াটা আপনার পক্ষে কষ্টদায়ক। আবার বন্ধুর এমন কাণ্ডও আপনি মেনে নিতে পারছেন না। কিন্তু মনে রাখুন এটা আপনার বন্ধুর জীবন। কাজেই জীবনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত তাঁকেই নিতে হবে। আপনার জায়গায় থেকে সচেতন করার দায়িত্ব ছিল, আপনি তা পালন করেছেন। এবার বরকে ছেড়ে অন্যজনের সঙ্গে ডেটিং-এ যাবে কিনা তা সম্পূর্ণ তাঁর সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে আমার-আপনার কিছুই করার নেই। মেনে নিতে সমস্যা হলে আপনি সরে আসুন। ওঁদের ব্যাপারের মধ্যে ঢুকবেন না।
বন্ধুর স্বামীকে একথা বলার আগে ভাবুন আপনার বন্ধু তা কী ভাবে নেবে। কারণ বিষয়টি বন্ধুর আর বন্ধুর স্বামীর একান্ত ব্যক্তিগত। কারোর ঠিক-ভুল আপনি নিজে ঠিক করতে দিতে পারেন না। কাজেই আপনি ওঁর স্বামীকে জানানোর পর বিষ.টি যদি অন্য দিকে মোড় নেয় সেক্ষেত্রে সকলেই দায়ী করবে আপনাকেই। তাই যে যার বিষয় তাকে নিজেকে বুঝে নিতে দিন। খুব প্রয়োজন হলে আপনি ব্রেস্ট ফ্রেন্ডকে একান্তে ডেকে পরামর্শ দিতে পারেন যে সে ঠিক করছে না। নিজের সীমা বজায় রাখতে। প্রয়োজনে বন্ধুকে কোনও কাউন্সেলরের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।