
মাথার ত্বক থেকে ঝরে পড়া সাদা সাদা খুশকি শুধু বিব্রতই করে না, চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণও। বিশেষ করে শুষ্ক আবহাওয়া বা ঋতু পরিবর্তনের সময় এই সমস্যা আরও বাড়ে। বাজারে একাধিক কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু থাকলেও, অনেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর ভরসা রাখেন। খুশকি আসলে একটি ছত্রাকজনিত সংক্রমণ (Malassezia Fungi) এবং মাথার ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা বা তেলতেলে ভাবের ফল। তবে কমবেশি সকলের রান্নাঘরেই এমন কিছু উপাদান মজুত থাকে, যা সঠিক উপায়ে ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে নিমেষে এবং মাথার ত্বক ফিরে পাবে তার স্বাস্থ্যকর পিএইচ (pH) ভারসাম্য।
খুশকি দূর করার ৫টি প্রাকৃতিক উপাদান ও ব্যবহার পদ্ধতি
মাথার ত্বক পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর রাখতে এই ৫টি প্রাকৃতিক উপাদান কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা নিম্নে আলোচনা করা হল:—
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাকের বৃদ্ধি রোধ করে এবং মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে। ১ ভাগ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের সঙ্গে ১ ভাগ জল মিশিয়ে পাতলা করে নিন। শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি দিয়ে চুল ও মাথার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। ম্যাসাজ করবেন না, শুধু ঢেলে দিন। এটি ধোওয়ার দরকার নেই। সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাবেন।
লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড খুশকির ছত্রাক মেরে ফেলে। নারকেল তেল মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে শুষ্কতা দূর করে। ২ চামচ নারকেল তেল হালকা গরম করে তার সঙ্গে ১ চামচ টাটকা লেবুর রস ভাল করে মেশান। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে হালকা হাতে মালিশ করুন। ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর হালকা অ্যান্টি-ড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেথি বীজে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ এবং এটি মাথার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। একমুঠো মেথি বীজ সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে জল ঝরিয়ে বীজগুলো মিহি করে বেটে নিন। এই পেস্টটি সরাসরি মাথার ত্বকে ভালভাবে লাগিয়ে রাখুন এবং শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত (৩০-৪০ মিনিট) অপেক্ষা করুন। এরপর ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।
টক দইয়ের প্রোবায়োটিক এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড মাথার ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে (মৃত কোষ দূর করে) এবং ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। হাফ কাপ টক দই নিন এবং সেটি মাথার ত্বকে ভাল করে লাগিয়ে ২০-৩০ মিনিট রাখুন। এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এটি চুলকে নরমও করে।
নিম পাতা খুশকি দূর করার এক প্রাচীন এবং শক্তিশালী সমাধান। নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ ছত্রাকজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। একমুঠো নিম পাতা বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এতে সামান্য মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকানি এবং খুশকি দুটোই কমাবে।
মনে রাখতে হবে, খুশকির সমস্যা পুরোপুরি দূর করতে ধৈর্য ও নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন। কোনও উপাদান ব্যবহারের পর যদি মাথার ত্বকে জ্বালা বা অ্যালার্জি অনুভব করেন, তবে তার ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করুন।