Saved for Trips: মুদির দোকানের অল্প আয়েই ১১টি দেশ ঘুরে তাক লাগিয়েছেন ৬১ বছরের ‘তরুণী’!

Travel Tips: জীবন একটাই। তাই বাকি জীবনটাই যে নানা দেশ ঘুরে বেড়াবেন তাতে আর সন্দেহ নেই। করোনার বিধি নিষেধ শিথিল হতেই বেড়িয়ে পড়েছেন ভ্রমণের নেশায়।

Saved for Trips: মুদির দোকানের অল্প আয়েই ১১টি দেশ ঘুরে তাক লাগিয়েছেন ৬১ বছরের 'তরুণী'!
ছবি সৌজন্যে দ্য বেটার ইন্ডিয়া
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 08, 2022 | 9:08 PM

শৈশব থেকেই স্বপ্ন ছিল। বিশ্বভ্রমণের (International Travel) নেশা চেপে বসেছিল স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। কেরালার কিরবানুকুলামের এর্নাকুলামে একটি নিম্নবর্তী পরিবারে মলি জয়ের (Molly Joy) জন্ম। দেশের তো বটেই, বিদেশ ভ্রমণের স্বপ্নের বুনন কখনও থামতে দেননি। চিত্রপুঝার স্থানীয় বাসিন্দা জয়ের সঙ্গে দেখা, তারপরই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৬ সালে পেটের ভাত জোগাড়া করার জন্য একটি মুদির দোকান (Grocery Shop Owner) খোলেন। সেখান থেকে যা আয় হত, দক্ষিণ ভারতের মধ্যে ছোট ছোট জায়গায় ভ্রমণের জন্য দম্পতি ঘুরে আসতেন। দুজনের পায়ে সরষে। ঘুরতে যেতে ভীষণ পছন্দ। তাই সময় ও সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পড়তেন দুজনে।

একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাত্‍কারে জানিয়েছেন, ‘আমি সবসময় আমাদের দোকানে বিক্রি হওয়া ম্যাগাজিনে ভ্রমণবৃতান্তগুলি পড়তাম। ভ্রমণের জন্য আমার মনোবল বজায় রাখার জন্য ওটাই অনেক প্রেরণার কাজ করত। অনেক দূরের স্থান সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করতাম। ‘ ৬১ বছর বয়সে এসেও এখনও বাকি দেশগুলি ঘুরে দেখার স্বপ্ন দেখেন। এখনও পর্যন্ত ১১টি দেশে ঘুরে এসেছেন।

২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে মারা যান স্বামী। জয়ের মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে মাঠে নেমে পড়তে হয় তাঁকে। সেইসময় ২০ বছরের ও ১৮ বছরের সন্তান পড়াশোনার খরচ যোগাতে মুদির দোকানে একাই দেখাশোনা করে গিয়েছেন। ছেলে চাকরি নিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছে, মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আপাতত নিজের কাছে অঢেল সময়। আর সেই সময়কেই কাজে লাগিয়েছেন বেশ কয়েকবছর ধরে। তাঁর প্রথম বিদেশ ভ্রমণের আগে চষে বেড়িয়েছেন দক্ষিণ ভারত। সঙ্গী ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেরি। পালানি, মাদুরাই, উটি, কোদাইকানাল, মায়সুরু, কোভালাম-সহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘মেরিই আমাকে প্রথম বিদেশ ভ্রমণের কথা জানিয়েছিল। ইউরোপ ভ্রমণ। খরচের ব্যাপারে প্রথমে ইসস্তত করেছিলাম, কিন্তু ভ্রমণের প্রতি ভালবাসা কখনও কিছু বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সেই সঙ্গে ছেলে-মেয়ের পূর্ণ সমর্থন ছিল। তাই সঞ্চিত অর্থ দিয়েই ভ্রমণের খাতায় নাম লেখালাম। ১৫দিনের ইউরোপ ভ্রমণের মধ্যে ইতালি, ফ্রান্স, ভ্যাটিকান, সুইত্‍জারল্যান্ড ও জার্মানি ঘুরে দেখা পাসপোর্ট পেয়েছিলাম।’ ওই ভ্রমণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের বয়স্ক দম্পতি। সেই দলের মধ্যে মলি-ই ছিলেন একা এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘গোটা ভ্রমণটিতে দারুণ উপভোগ করেছিলাম। নতুন নতুন বন্ধু তৈরি হয়েছিল। এটি যে কোনও ভ্রমণের জন্যও সেরা পার্ট। ইংরেজিতে আমার সামান্যই জ্ঞান। তাই দিয়েই ইউরোপ ঘুরে এসেছি।’ ১০ লক্ষ টাকা সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে গত ১০ বছরে ১১টি দেশ ভ্রমণ করেছেন এই ৬১ বছরের বৃদ্ধা।

করোনা অতিমারির কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বিধি নিষেধ ছিল। তাই ভ্রমণের থেকে কিছুটা বিরতি নিয়েছিলেন। জীবন একটাই। তাই বাকি জীবনটাই যে নানা দেশ ঘুরে বেড়াবেন তাতে আর সন্দেহ নেই। করোনার বিধি নিষেধ শিথিল হতেই বেড়িয়ে পড়েছেন ভ্রমণের নেশায়। গত বছরের নভেম্বরের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ১৫ দিনের জন্য নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ফিলাডেলাফিয়া, পেনসিলভানিয়া ও নিউ জার্সি সফর শেষ করেছেন। লাস ভেগাসের মন্ত্রমুগ্ধ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ও ইউনিভার্সাল স্টুডিয়ো হল তাঁর দেখা সেরা স্পট। বিদেশে ভ্রমণের নেশা চেপে ধরলেও মাথায় চিন্তা বাড়াচ্ছে পুঁজি। তাই যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সেখানে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন নিজেই।

অল্প পুঁজি নিয়ে দেশ-বিদেশ ভ্রমণের এমন নেশার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘স্কুলে পড়ার সময় থেকেই ঘরে আর্থিক অনটন ছিলই। তাই অর্থের অভাবে স্কুল থেকে ফিল্ড ট্রিপে যেতে পারেননি কখনওই। তবে এখনও যে বিশাল আয় তাও নয়। তবুও যা উপার্জন করি তা নিয়ে আমি এমন কিছু ব্য়য় করি যা আমাকে সবচেয়ে খুশি করে। আর সেটাই বারবার করে চলেছি।’

‘ভ্রমণ আমাকে স্বাধীনতা দেয়। সাহস যোগায়। প্রতিটি ভ্রমণের পরে ক্লান্তবোধ করার পরিবর্তে আর বেশি করে ভ্রমণের জেদ চেপে যায়। অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করি পরের যাত্রাপথের দিকে তাকিয়ে থেকে। প্রিয় ভ্রমণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেড়িয়ে পরি। ‘ সঙ্গে থাকে প্রতিটি ভ্রমণের ক্যামেরাবন্দি হয়ে থাকা একটি অ্যালবাম।