‘দ্য জঙ্গল বুক’-এর হারজিৎ-কে মনে আছে? এবার সেই ‘হারজিৎ’-এর দেখা মিলল চিল্কায়। ওড়িশার চিল্কায় অস্তিত্ব মিলল হানি ব্যাজারের। ভালুকের মতোই দেখতে ছোট্ট এই প্রাণী। দাঁত আর নখের সাহায্যে মাটির নীচে গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায় এরা। হাবে-ভাবে এবং দেখতে হিংস্র হলেও সহজে মানুষের ক্ষতি এরা করে না। বরং থাকার জন্য নির্জন এলাকা বেছে নেয়। প্রিয় খাবার মৌচাক ভেঙে মধু এবং মৌমাছিদের লার্ভা। এদের গায়ের চামড়া এতটাই মোটা যে, মৌমাছিরা এদের গায়ে হুল ফোটাতে পারে না। এমনকী বাঘ, সিংহের দাঁতও এদের জখম করতে পারে না। এই হানি ব্যাজারেরই এবার দেখা মিলল ওড়িশার চিল্কায়।
‘দ্য ফিশিং ক্যাট প্রজেক্ট’ এবং ‘চিল্কা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’-র যৌথ উদ্যোগে বেশ কিছু বছর ধরে চিল্কায় ফিশিং ক্যাট বা বাঘরোল প্রজেক্ট চলছে। সেই প্রজেক্টের অংশ হিসেবে চিল্কা হ্রদ সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ক্যামেরা বসানো হয়। সেখানে চলতি বছরের অগস্টে ধরা পড়ে হানি ব্যাজারের ছবি। কিন্তু এটাই প্রথম নয়। ‘দ্য ফিশিং ক্যাট প্রজেক্ট’-এর উদ্যোক্তা, বন্যপ্রাণ গবেষক তিয়াসা আঢ্য TV9 বাংলাকে বলেন, “২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় তিনবার হানি ব্যাজারের দেখা পাওয়া গিয়েছে চিল্কা সংলগ্ন তিনটি গ্রামে। প্রথমবার ২০১৮ সালে তুরান গ্রামে কুয়োর মধ্যে একটি হ্যানি ব্যাজার পড়ে যায়। বনকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে এবং তার ছবি তুলে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তিতিপো গ্রামেও একই ঘটনা ঘটে। একটি হ্যানি ব্যাজার শুকনো কুয়োর মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু তাকে উদ্ধার করা হয়নি। সারারাত প্রাণীটি কুয়োর মধ্যে থাকে। ও দাঁত আর নখ দিয়ে মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে যায়।”
২০২০ সালে আবার দেখা মেলে হানি ব্যাজারের। তিয়াসার কথায়, “মংলাজোরি গ্রামে একটি হানি ব্যাজারের দেখা যায়। কিন্তু গ্রামবাসীরা ভয় পেয়ে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমাদের কাছে প্রথম থেকেই খবর ছিল যে, চিল্কা অঞ্চলে হ্যানি ব্যাজার রয়েছে। আমরা গ্রামবাসীর মুখে বিবরণ এবং তাদের তুলে রাখা ভিডিয়ো ছবি দেখি। তখনই বুঝতে পারি এখানে হ্যানি ব্যাজার রয়েছে। কিন্তু আমরা নিজেরা কখনও দেখতে পাইনি। এরপর ‘দ্য ফিশিং ক্যাট প্রজেক্ট’ এবং ‘চিল্কা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র যৌথ উদ্যোগে চিল্কায় ক্যামেরা বসানো হয়। ২০২২-এর অগস্টে সেই ক্যামেরায় ধরা পড়ে হ্যানি ব্যাজারের ছবি।”
আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশে বেশ ভাল সংখ্যায় হ্যানি ব্যাজারের দেখা পাওয়া যায়। ভারতে হ্যানি ব্যাজারের দেখা মিললেও সংখ্যায় তা নগণ্য। ওয়াইল্ডলাইফ বায়োলজিস্ট রাকেশ কালভা TV9 বাংলাকে বলেন, “পূর্বঘাট পর্বতমালায় হ্যানি ব্যাজারের দেখা পাওয়া যায়। এরা সহজেই শুকনো এলাকার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। কিন্তু এমনটা নয় যে জলজ এলাকায় এরা থাকে না। যে কোনও ধরনের ভূমি বা পরিবেশে এরা থাকতে পারে। কারণ হ্যানি ব্যাজার সাপ, বিচে, টিকটিকি, ইঁদুর সব কিছু খায়। তাছাড়া এই প্রাণী বেশিরভাগ রাতের অন্ধকারে বের হয়। তাই-ই সহজে মানুষের চোখে পড়ে না।” তিয়াসার ধারণা যেহেতু চিল্কা থেকে পূর্বঘাট পর্বতমালা খুব বেশি দূরে নয়, তা-ই হয়তো সেখান থেকেই চিল্কায় এই প্রাণীর বংশবিস্তার হয়েছে।