গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নাম শুনলেই ভেসে ওঠে আমেরিকার সেই ভূমিরূপের ছবি। অ্যারিজোনায় রুক্ষ জমির মধ্যে বয়ে যাওয়া কলোরাডো নদীর জলে পাথর ক্ষয়ে ক্ষয়ে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। এই আশ্চর্য ভূমিরূপ দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ছুটে যান সেখানে। কিন্তু আম বাঙালির পক্ষে চাইলেই ততটা সহজ নয় বারবার আমেরিকার ভ্রমণ। পকেটের দিকেও একটু নজর দেওয়া দরকার। কিন্তু আমরা যদি বলি বঙ্গে বসেই আপনি গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের দর্শন করতে পারবেন। আর সেটাও বাজেটের মধ্যে। বিশ্বাস হচ্ছে না? পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। জায়গার নাম গনগনি।
পশ্চিম মেদিনীপুরে শিলাবতী নদীর ধারে অবস্থিত গনগনি। একে বলে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’। আমেরিকার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে গনগনি টেক্কা দিতে পারবে কি না, সেই তর্কে আমরা যাচ্ছি না। কিন্তু বসন্তের আমেজে একদিনের ছুটি কাটানোর জন্য আপনার সেরা ডেস্টিনেশন হতে পারে গনগনি। এই গনগনির শিলাবতী নদীর জন্যই তৈরি হয়েছে। কলোরাডো নদীর মতোই শিলাবতী বয়ে চলে এই গনগনির মধ্য দিয়ে। লাল ও গেরুয়া মাটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে তৈরি হয়েছে এই ভূমিরূপ। তবে এখানে শিলাবতী শুধু বর্ষার সময়ই ফুলে ফেঁপে ওঠে। তখন এই গনগনি অন্যরূপ ধারণ করে। তাই বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নকে যদি দেখতে হয়, তাহলে শীতের মরশুমে যাওয়াই ভাল। তবে এখন বাংলায় বসন্ত। চারদিক শিমুল, পলাশে ভরে উঠেছে। এই মনোরম পরিবেশেও ঘুরে আসতে পারেন গনগনি।
পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় অবস্থিত গনগনি। শিলাবতী নদী চলা পথে কোথাও গুহা আবার কোথাও গিরিখাত তৈরি করেছে। যদিও স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানের কোনও এক গুহায় বকাসুর বাস করতেন। তাঁকে ভীম বধ করেছিলেন এখানেই। তবে, বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনেরও অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ভূতত্ববিদরা মতে, শিলাবতীর স্রোতে এই গভীর খাদ তৈরি হয়েছে। আর সেটা একদিন হয়নি। হাজার-হাজার বছর ধরে তৈরি হয়েছে গনগনি। তবে, এখন গনগনি হয়ে উঠেছে বাঙালিদের অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র।
চারদিক ঘেরা সবুজ জঙ্গলে। লাল ও গেরুয়া মাটির খাদ। সেই দেওয়ালেই তৈরি হয়েছে ছোট ছোট ভাস্কর্য। এখানকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের টানেই শীতের মরশুম থেকে পর্যটকেরা ভিড় করেন এখানে। তাছাড়া এখানকার পরিবেশ অনেক বেশি শান্ত ও নিরিবিলি। যাঁরা লং ড্রাইভে যেতে ভালবাসেন কিংবা একদিনের সফরের জন্য কোনও ডেস্টিনেশন খুঁজছেন, তাঁরা এই বসন্তে ঘুরে আসতে পারেন গনগনি।
কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন-
সড়কপথে আরামবাগ হয়ে যেতে পারেন গনগনি। অনেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ঘোরার সময়ও গনগনি ঘুরে আসেন। এছাড়া যে কোনও পুরুলিয়াগামী ট্রেনে চেপে গড়বেতা নামুন। সেখান থেকে টোটোয় চেপে চলে যান গনগনি। গনগনিতে রাত্রিযাপনের কোনও সুবিধা নেই। সম্প্রতি পর্যটন দফতরের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে একটি সরকারি কটেজ। এখানে রাত কাটাতে চাইলে আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভাল।