
হাতে দু’দিনের ছুটি। কাছেপিঠে ঘুরতে যেতে চান। দিঘা-মন্দিরমণি নিয়ে মন ভরে গেলে, বাঙালি যায় শান্তিনিকেতন। রবি ঠাকুরের টানে শুধু নয়। সোনাঝুড়ির হাট, শিল্পী গ্রাম, খোপাইয়ের পাড়, কংকালীতলা মন্দির এসব দেখতে বাঙালি বেশি ভিড় করে বোলপুরে। তবে, এগুলো ছাড়াও বোলপুরে এমন একটা জায়গা রয়েছে, যাকে কেন্দ্র জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস আর ভৌতিক কাহিনি। বোলপুর শহরের ইলামবাজারের কাছে রয়েছে রাইপুর গ্রাম। এই গ্রামের মূল আকর্ষণ রাইপুর রাজবাড়ি। এই পরিত্যক্ত রাজবাড়ি আপনার শান্তিনিকেতন ট্রিপের অংশ হয়ে উঠতে পারে।
এক সময় অজয় নদীর তীরে ছিল আদমপুর। বন্যায় ভেসে যায় পুরো গ্রাম। নতুন বসতি গড়ে ওঠে আদমপুরের উত্তর দিকে। তৎকালীন জমিদার ছিল রায়চৌধুরীরা। সেখান থেকেই গ্রামের নাম হয়ে যায় রায়পুর বা রাইপুর। এটাও শোনা যায় যে, রাইপুরের সিংহ পরিবারের নাম অনুযায়ী গ্রামের গ্রাম রায়পুর বা রাইপুর। এই রাইপুরের সিংহ পরিবারের বাড়িই আজকের রাইপুর রাজবাড়ি। তবে, এই রাজবাড়ি ঘিরে রয়েছে ইতিহাস।
ব্রিটিশ শাসিত বাংলায় যেসব জমিদার পরিবার খ্যাতি অর্জন করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম রাইপুরের সিংহ পরিবার। ১৭৬৪ সালে মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা থেকে লালচাঁদ দে রাইপুর চলে আসেন। ব্যবসায়ী পরিবার রাইপুর আসায়, বীরভূমের একাধিক গ্রাম সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। সেই সময় রায়চৌধুরীদের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। ১৭৭০ সালে রাইপুর চৌধুরীদের থেকে জমিদারী কিনে নেয় লালচাঁদ। লালচাঁদের তিন ছেলে—পঞ্চানন, রামকিশোর ও শ্যামকিশোর। ১৭৭৩ সালে ৬০ বিঘা জমির উপর তিন ছেলের জন্য তিনটি বাড়ি তৈরি করেন লালচাঁদ। এই তিনটি বাড়িতে ১২০টি ঘর ছিল। শ্যামকিশোরের নাতি বিশ্বম্ভর সিংহ বর্ধমানের রাজা তিলকচাঁদ তাঁকে ‘রায়’ উপাধি দেন। শোনা যায়, সেখান থেকেও এই গ্রামের নাম হয় ‘রায়পুর’ বা ‘রাইপুর’।
সিংহ পরিবারের নামডাক হয় সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের জন্য। ১৯১৫ সালে জাতীয় কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। ১৯২০ সালে তিনি বিহার ও উড়িষ্যার গভর্নর পদে নিযুক্ত হন। তাঁকে রাইপুরের ‘রাজা’ বলা হত। তাঁর জন্য বোলপুরের রাইপুর রাজবাড়ি এত বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু বর্তমানে রাইপুর গেলে এই রাজবাড়ির ধ্বংসস্তূপ দেখতে পাবেন।
প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাইপুর রাজবাড়ি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজবাড়ির অবস্থা খুব শোচনীয়। এছাড়াও এই বাড়িকে কেন্দ্র করে ভৌতিক গল্প প্রচলিত রয়েছে। স্থানীয় মানুষদের মুখে-মুখে শোনা যায় এই বাড়িকে কেন্দ্র নানা অদ্ভুত ঘটনা। তাই শনিবার এই রাইপুর রাজবাড়ি প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে, বোলপুর বেড়াতে গেলে দেখতে আসতে পারেন রাইপুর রাজবাড়ি।