
ওজন কমানো (Weight Loss) আজকালকার লাইফস্টাইলের এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। দ্রুত ফল পেতে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া বা বন্ধুদের দেখে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ‘ওজন কমানোর ওষুধ’ বা ‘ওয়েট লস মেডিসিন’-এর দিকে ঝুঁকছেন। অনেক বিশেষজ্ঞই বারবার সতর্ক করছেন—এই তথাকথিত ‘শর্টকাট’ আপনার শরীরকে চটজলদি স্লিম দেখালেও ভেতর থেকে মারাত্মক দুর্বল করে দিতে পারে।
বর্তমানে বাজারে জনপ্রিয় কিছু ওজন কমানোর ওষুধ (যেমন GLP-1 ভিত্তিক ইনজেকশন বা পিল) মূলত শরীরের খিদে নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনগুলিকে সক্রিয় করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। এর ফলে তাড়াতাড়ি পেট ভরে যায় এবং কম খেলেও সন্তুষ্টি আসে, যার ফলে দ্রুত ওজন কমে।
তবে এই ওষুধগুলি সাধারণত ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা হৃদরোগের মতো গুরুতর সমস্যায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শে দেওয়া হয়। কিন্তু যখন কোনও সুস্থ বা বেশি ওজনের মানুষ কেবল দ্রুত স্লিম হওয়ার ফ্যাশনে এদের বেশি ব্যবহার শুরু করেন, তখনই বিপদ শুরু হয়।
দিল্লির শ্রী বালাজি অ্যাকশন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজ বিভাগের ডিরেক্টর ড. অরবিন্দ আগরওয়াল এর মতে, এই ওষুধগুলির ব্যবহারের সবচেয়ে বড় এবং চিন্তার কারণ হল পেশি বা মাসলের ক্ষয়। যখন দ্রুত ওজন কমে, তখন শরীরের শুধু চর্বি বা ফ্যাট কমে না, গুরুত্বপূর্ণ পেশিও ভাঙতে শুরু করে।
শরীরের গঠন পরিবর্তন: পেশি কমে যাওয়ায় শরীর ঢিলে এবং ঝুলে যায়। নিতম্ব এবং উরুর পেশি কমে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে এটিকে ‘ওজেম্পিক বাট’ বলা হচ্ছে।
দুর্বলতা এবং ভারসাম্যহীনতা: পেশির জোর কমে যাওয়ায় শরীর দুর্বল লাগে। সামান্য কাজ করলেই ক্লান্তি আসে এবং শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: দীর্ঘমেয়াদী এই ওষুধগুলি ব্যবহারের ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়।
শারীরিক সক্ষমতা হ্রাস: ব্যায়াম করার ক্ষমতা কমে যায় এবং বয়স্কদের মধ্যে আচমকা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
পেশির ক্ষয় ছাড়াও এই ওষুধগুলির আরও কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন – বমি বমি ভাব ও বমি হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা হয়, মাথা ঘোরে এবং চরম দুর্বল লাগে।
জিটিবি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডক্টর অজিত কুমার স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, অনলাইনে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ঝুঁকি।
ডাক্তারের পরামর্শ অপরিহার্য: চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওজন কমানোর কোনো ওষুধ খাবেন না।
প্রোটিনযুক্ত খাদ্য: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রাখুন, যা পেশি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
স্ট্রেন্থ ট্রেনিং: সপ্তাহে অন্তত ৩ থেকে ৪ বার ভার নিয়ে ব্যায়াম করুন।
শর্টকাট নয়: ওষুধকে কখনওই ফ্যাশন বা ওজন কমানোর ‘শর্টকাট’ হিসেবে দেখবেন না। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারাতেই ভরসা রাখুন।
মনে রাখবেন, সুস্থভাবে রোগা হওয়াটাই আসল লক্ষ্য। ভেতরের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলে চটজলদি স্লিম হওয়ার প্রবণতা থেকে বিরত থাকুন।