
যতই দিনকাল বদলে যাক না কেন শ্বশুরবাড়ি নিয়ে অধিকাংশ মেয়ের মনে এখনও থাকে আতঙ্ক। নতুন একটা পরিবেশে গিয়ে চট করে মানিয়ে নেওয়া যে কোনও কারোর পক্ষেই কঠিন। শাশুড়ি কেমন হবে, আদৌ মানিয়ে চলা যাবে কিনা, ছেলে-বৌমার বিষয়ে কতটা নাক গলাবেন এসব নিয়ে চিন্তা থাকে সব মেয়েরই। এখন দিনকাল বদলেছে। অনেক ছোট বয়স থেকেই মেয়েরা হোস্টেলে, পিজিতে থেকে পড়াশোনা করে। এমনকী কর্মসূত্রেও অনেকে বাড়ির বাইরে থাকে। ফলে নিজের মতো গুছিয়ে থাকতে থাকতে তারা একরকম জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজের মতো করে খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া, থাকা মোটকথা স্বাধীন জীবনযাপনই তাঁদের পছন্দ। সেখান থেকে পুরোপুরি সাংসারিক ঘেরাটোপে এসে তাঁরা মানিয়ে নিতে পারেন না। আর যদি শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে একই ঘরে থাকতে হয় তখন সমস্যা বাড়ে। কারণ নিজের মতো স্পেস থাকে না।
কর্মজগৎ নিয়েও সকলে ভীষণ রকম ব্যস্ত। ফলে সাংসারিক জাঁতাকলে মাথা গলানোর মত সুযোগ কারোরই থাকে না। এমনকী নিজের কাজ শেষ করে শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে খোশ গল্প করবে ছেলে-বৌমা এমন আশা শাশুড়িরও রাখা উচিত নয়। অধিকাংশই এখন সিঙ্গল চাইল্ড। ফলে মা-বাবারা সন্তানকে অনেক বেশি যত্নে-আগলে রাখেন। আর অতিরিক্ত আগলে রাখার জন্য এমন অনেকেই আছেন যাঁরা সাবলম্বী হতে পারেন না। নিজের কাজ যে নিজেকেই করতে হবে এরকম মানসিকতাও তৈরি হয় না।
ছেলের মা-ভাবেন ছেলে আমার হাতছাড়া হয়ে গেল বুঝি। আর তাই তিনি নিজের মত করে অধিকার ফলাতে চান। ছেলের ভাল-মন্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে শুরু করা থেকে বৌমার খুঁত ধরা, বৌমার ভুল গুলোই বার বার তুলে ধরতে চান ছেলের সামনে। অদৃশ্য একটা লড়াই চলতেই থাকে। এতো গেল একদিন। অন্যদিকে কম যান না মেয়ের মায়েরাও। এমন অনেক মা-আছেন যাঁরা ভাবেন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু মেয়ে এখনও সেই ১৬ বছরের কিশোরী। ফলে শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবে, কী ভাবে মানিয়ে চলবে, কাকে কতখানি পাত্তা দেবে- মোটকথা মেয়ের বাড়ির সাংসারিক জটিলতায় ঢুকে পড়েন। মেয়ের সুবিধার কথা ভেবেই দিনের পর দিন মেয়ের কাছেই থাকেন। ভুলটা এখানেই। কোনও একটা নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে দুজনকেই সময় দিতে হয়। একে অপরকে বুঝতে হয়। আর সেখানে যদি মা-বাবা গিয়ে নাক গলান তাহলে মুশকিল। এতে স্বামী-স্ত্রীয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে।
তাই মেয়ের মা হিসেবে আপনার কর্তব্য-
*অযথা মেয়ের সংসারে নাক গলাবেন না। এতে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বাড়বে। তবে পরামর্শ অবশ্যই দেবেন। কিন্তু তা যেন সবসময়ই শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে না হয়।
*মেয়ে-জামাইকে নিজের মত করে স্পেস দিন।
*জামাইকে নিজের ছেলের মত আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কখনও জামাইকে তার মা-বাবার বিরুদ্ধে কোনও কথা বলবেন না।
*বরং মেয়েকে বোঝান নিজের মত করে সব গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। এতে আপনার মেয়েই সুখে থাকবে।