
শীতকাল মানেই চারিদিকে আলস্যের আমেজ। এখনও শীত আসতে খানিক দেরি। কিন্তু আগেভাগেই ওই সময়ের জন্য প্ল্যান জরুরি। এই সময় শরীরকে কর্মক্ষম রাখা এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সঠিক ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা অপরিহার্য। ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলি এই সময়ে বেশি দেখা যায়। তাই খাবারের মাধ্যমে শরীরকে ভেতর থেকে উষ্ণ রাখা এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করা জরুরি।
শীতকালে শরীর উষ্ণ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনার ডায়েট প্ল্যানে কোন কোন খাবারগুলি অবশ্যই থাকা উচিত? নিম্নে তা নিয়ে আলোচনা করা হল।
সাধারণ ভাত বা রুটির পাশাপাশি কিছু বিশেষ শস্য আপনার শরীরে দীর্ঘক্ষণ ধরে উষ্ণতা বজায় রাখে। আপনার পাতে যা যা রাখতে পারেন সেগুলি হল –
বাজরা এবং রাগি: এই শস্যগুলি ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় মিনারেলসে ভরপুর। এদের হজম হতে সময় লাগে, যা শরীরে ধীরে ধীরে তাপ উৎপাদন করে। বাজরা বা রাগির রুটি/খিচুড়ি শীতের ডায়েটে যোগ করুন।
লাল আটার রুটি: লাল আটাতে ফাইবার এবং ভিটামিন বি থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
কিছু মশলা প্রাকৃতিকভাবেই শরীরকে গরম রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আপনার পাতে যা যা রাখতে পারেন সেগুলি হল –
আদা ও হলুদ: উভয়ই অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণসম্পন্ন। প্রতিদিন সকালে উষ্ণ জলে আদা ও হলুদের রস বা আদা চা পান করলে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কমে। হলুদ মেশানো দুধ রাতে পান করলে শরীর উষ্ণ থাকে।
গোলমরিচ, দারচিনি ও লবঙ্গ: এই মশলাগুলি শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে তাপ উৎপন্ন করে। চায়ে বা স্যুপে এই মশলা ব্যবহার করতে পারেন।
তুলসী: তুলসী পাতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সর্দি-কাশি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
শীতকালে প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর শাকসবজি পাওয়া যায়। যা শরীরকে শক্তি দেয় ও শরীর উষ্ণ রাখে। আপনার পাতে যা যা রাখতে পারেন সেগুলি হল –
পালং শাক: আয়রনের চমৎকার উৎস। যা রক্ত চলাচল ঠিক রেখে শরীরকে উষ্ণ রাখে।
সর্ষে শাক ও মেথি শাক: এই শাকগুলি ভিটামিন এ, সি এবং কে-এর ভাল উৎস। এদের প্রাকৃতিক উষ্ণতা শরীরকে ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করে।
গাজর ও বিট: এই সবজিগুলি বিটা-ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গাজরের স্যুপ বা হালুয়া শীতকালে খুব উপকারী।
ঠান্ডা মোকাবিলার জন্য শরীরের প্রয়োজন পর্যাপ্ত শক্তি। যা ফ্যাট ও প্রোটিন সরবরাহ করে। আপনার পাতে যা যা রাখতে পারেন সেগুলি হল –
ডিম: প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম সকালের নাস্তার জন্য আদর্শ। এটি শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে এনার্জি দেয়।
বাদাম ও বীজ: আমন্ড, আখরোট, চিনাবাদাম এবং তিল শরীরে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সরবরাহ করে এবং শরীরকে গরম রাখে। তিলের তৈরি মিষ্টি বা নাড়ু শীতকালে জনপ্রিয়।
ঘি: খাবারে সীমিত পরিমাণে ঘি যোগ করলে তা পাচনতন্ত্রকে সচল রাখে এবং শরীরকে উষ্ণতা প্রদান করে।
ঠান্ডার সময় শরীরকে সতেজ রাখতে এবং জলশূন্যতা এড়াতে উষ্ণ পানীয় অপরিহার্য। আপনার পাতে যা যা রাখতে পারেন সেগুলি হল –
স্যুপ: বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি স্যুপ শরীরকে শক্তি দেয় এবং ঠান্ডা দূর করতে সাহায্য করে।
গ্রিন টি বা হার্বাল টি: সাধারণ চায়ের বদলে আদা, তুলসী, বা গ্রিন টি পান করলে ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর সতেজ থাকে।
মধু: মধুর প্রাকৃতিক এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঠান্ডা দূর করতে এবং ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। চায়ে বা উষ্ণ জলে মধু মিশিয়ে পান করুন।