বাঙালি ইউটিউবারদের রেজ়াল্ট দেখলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। অধিকাংশ জনপ্রিয় ইউটিউবারই সায়েন্স স্টুডেন্ট। চিরাচরিতভাবে ডাক্তারি কিংবা ইঞ্জিনিয়রিং পড়েননি তাঁরা। নিজেদের মনের কথা শুনেছেন। খেটেছেন এবং নক্ষত্র হয়ে জ্বলজ্বল করছেন মাঝ আকাশে। লক্ষ-লক্ষ অর্থ উপার্জনও করছেন তাঁরা।
'বাঁকুড়া মিমস'-এর অন্যতম ক্রিয়েটার উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়: মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২০১০ সালে। পেয়েছিলেন ৮২% নম্বর। তারপর ২০১২ সালে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন সায়েন্স নিয়ে। সেই পরীক্ষায় পেয়েছেন ৬৩%। স্নাতক হয়েছেন এনএসএইচএম থেকে। বিষয় ছিল মাস কমিউনিকেশন। পরবর্তী কালে কর্ণাটকের মণিপাল থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন মাস কমিউনিকেশনে। আজ তিনি একজন সফল ইউটিউবার।
নিজের রেজ়াল্ট জানিয়ে TV9 বাংলাকে উন্মেষ বলেছেন, "প্রথম প্রথম বাড়ির ও আমার দু'জনেরই অনিশ্চয়তা ছিল। মনে হয়েছিল ইউটিউবার হয়ে কী হবে। কিন্তু আস্তে-আস্তে মানুষ আমাদের কাজ দেখতে শুরু করলেন। এখনও পর্যন্ত সব ঠিকই চলছে।"
'ওয়ান্ডার মুন্না'র ক্রিয়েটার ইন্দ্রাণী বিশ্বাসও সায়েন্সের ছাত্রী। মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৭৫% নম্বর। উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৬৫%। স্নাতক হয়েছেন আশুতোষ কলেজ থেকে। বিষয় ছিল ইংরেজি সাহিত্য। স্নাতকোত্তর শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী থেকে। সাংবাদিকতা পড়েছিলেন সেখানে।
TV9 বাংলাকে ইন্দ্রাণী বলেছেন, "আমি সায়েন্স নিয়ে পড়েছিলাম। একটা সময় পার্ট টাইম চাকরি করেছিলাম কনটেন্ট রাইটার হিসেবে। সেই কাজের সঙ্গে ইউটিউব করতাম।"
এদিকে স্যান্ডি সাহাও দারুণ ছাত্র। তিনিও তাক লাগানো নম্বর পেয়েছিলেন মাধ্যমিক- উচ্চমাধ্যমিকে। মাধ্যমিকে তিনি পেয়েছিলেন ৭৮.৫% নম্বর। উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৬০%। তিনিও সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। স্নাতকও সায়েন্সেই। ফিজ়িওলজ়িতে বিএসসি (B.Sc) করেছিলেন। স্নাতকোত্তর ইভিএস-এ (এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স)।
TV9 বাংলাকে স্যান্ডি বলেছেন, "কলেজে পড়তে পড়তে ইউটিউব করছিলাম। তখন থেকেই লোকে আমাকে চিনে গিয়েছিল। এখনকার ছেলেমেয়েরা ৮-৯ ক্লাসে পড়তে-পড়তেই ভাবে ইউটিউবার হবে। তবে আমি বলব, বেসিক এডুকেশন (প্রাথমিক শিক্ষা) খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন শুরু করেছিলাম ফেসবুক কিন্তু টাকা দিত না। ফলে আমি কোনওদিনও ভাবিনি এটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেব। আমার ভাল লাগার জায়গা থেকে কাজটা করতাম। আস্তে-আস্তে আমি ইউটিউবে কাজ করতে শুরু করি। এমএসসি তখনই শেষ করি। তখন লকডাউন চলছিল। সবাইকে একটাই কথা বলব, যাই করো না কেন প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করতেই হবে। ওটা কিন্তু খুবই দরকারি বিষয়।"
আপনারা ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছেন 'দ্য বং গাই' কিরণ দত্তও সায়েন্সের ছাত্র। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের অধিকাংশ বিষয়েই 'AA' পেয়েছেন কিরণ। অর্থাৎ, তিনি 'আউটস্ট্যান্ডিং'।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লাস টেনের বোর্ডসের রেজ়াল্ট শেয়ার করে কিরণ লিখেছেন, "তখন আবেগে লিখেছিলাম। এখন ও সহমত পোষণ করি তবে এটাও বলব , যেকোনও ফিল্ডেই কাজ করো বেসিক এডুকেশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কিছু করতে চাইলে পড়তে হয় না এটা ভুল। তবে রেজ়াল্টের জন্য নিজেকে কম ভাবা ,ভেঙে পরা উচিত না। নিজে পরিশ্রম করতে জানলে আর নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে কেউ আটকাতে পারবেন না..."