
স্বামী-স্ত্রী মধ্যে বিচ্ছেদের মামলা হলে, সাধারণত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অধিকার রক্ষার জন্য অনেক রকম আইন রয়েছে ভারতে। তবে কেউ কেউ সেই আইনকেই রোজগারের সহজ উপায় হিসাবে বেছে নেয়। আজকাল বিয়ে করে প্রতারণা করে স্বামীর থেকে মোটা অঙ্কের খোরপোশ আদায় করার ঘটনাও সামনে আসে বহু। এবার সেই বিষয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ জানাল দিল্লি হাইকোর্ট। একটি মামলার রায় দিতে গিয়েই দিল্লি হাইকোর্ট জানায় আইন কোনও ভাবেই অলসতাকে উৎসাহিত করে না। উপার্জন করতে সক্ষম হলে, মহিলাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ চলার সময় স্বামীর কাছে অন্তর্বর্তীকালীন ভরণপোষণের দাবি জানানো উচিত নয়।

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি চন্দ্র ধরি সিং ১৯ মার্চ জানান, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২৫ নম্বর ধারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমতা বজায় রাখা এবং স্ত্রী, সন্তান এবং পিতামাতাকে সুরক্ষা প্রদানের কথা বলে। তবে তা কখনই 'অলসতা'কে প্রচার করে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে এক মহিলার অন্তর্বর্তীকালীন ভরণপোষণের দাবিও খারিজ করে দেন তিনি।

তিনি বলেন, "একজন সুশিক্ষিত স্ত্রী, যার লাভজনক চাকরি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাঁর কেবল স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার জন্য অলস থাকা উচিত নয়। এই আদালত আবেদনকারীর মধ্যে উপার্জন এবং তার শিক্ষার সুফল অর্জনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে তাই, বর্তমান মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন ভরণপোষণের দাবি খারিজ করছে।"

তবে আদালত তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সক্রিয়ভাবে চাকরি খোঁজার জন্য উৎসাহিত করছে। বিচারপতি জানান, আবেদনকারী মহিলার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে এবং তিনি পার্থিব বিষয় সম্পর্কেও সচেতন। সেই সব মহিলাদের মতো নয়, যাঁরা মৌলিক ভরণপোষণের জন্য তাঁদের স্বামীর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।

প্রসঙ্গত, এই দম্পতি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে করেন, তারপর সিঙ্গাপুর চলে যান। মহিলা অভিযোগ করেন তিনি তাঁর স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের নিপীড়নের কারণে ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে ভারতে ফিরে আসেন। দেশের ফেরার জন্য নিজের গয়না বিক্রি করে দিতে হয় তাঁকে। এমনকি আর্থিক সংকটের কারণেনিজের মামার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি।

এরপরে ২০২১ সালের জুন মাসে, স্বামীর কাছে খোরপোশ দাবি করে আদালতে একটি আবেদন করেন তিনি। তবে ট্রায়াল কোর্ট তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিলে তিনি হাইকোর্টে যান। মহিলা যুক্তি ট্রায়াল কোর্ট তাঁর ভরণপোষণের আবেদন খারিজ করে ভুল করেছে। তিনি বেকার, তাঁর কোনও স্বাধীন আয়ের উৎস ছিল না। অথচ তাঁর স্বামীর ভালো আয় রয়েছে এবং সমৃদ্ধ জীবনযাপন করেন।

এরপরেই মহিলার স্বামী আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, এটি আইনের অপব্যবহার কারণ তাঁর স্ত্রী উচ্চ শিক্ষিত এবং উপার্জনে সক্ষম। তিনি বলেন, কেবল বেকারত্বের কারণে মহিলা ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন না।

তবে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়ে ট্রায়াল কোর্টের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে। ভরণপোষণ দেওয়ার বিষয়ে অস্বীকৃতি জানিয়ে হাইকোর্ট বলেন, সুস্থ ও যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ভারতের ফিরে এসে উপার্জন করার পরিবর্তে তিন কেন অলস হয়ে বসে রইলেন! আদালত আরও জানায় যে ওই মহিলা অস্ট্রেলিয়া থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিয়ের আগে নিজে দুবাইতে ভালো আয় করতেন।

হাইকোর্ট আরও জানায়, মহিলা যে চাকরি খোঁজার চেষ্টা করছেন, তাঁর কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করেননি বা তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেননি। আদালত বলে, "প্রমাণ ছাড়া নিছক চাকরি খোঁজার দাবি, স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রকৃত প্রচেষ্টা প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট নয়।"