প্রয়াগরাজে চলছে মহাকুম্ভ। নাগা সন্ন্যাসীদের মহাকুম্ভের প্রধান আকর্ষণ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এঁদের দেখতেই ভিড় জমান বহু মানুষ। সারা গায়ে ভস্ম মাখা, মাথায় বিশাল চুলের জটা, গলায় হাতে রুদ্রাক্ষের মালা এবং সারা গায়ে নেই কোনও পোশাক।
কেন এমন অদ্ভুত চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়ান তাঁরা? কেনই বা চুল কাটেন না নাগা সন্ন্যাসীরা? নাগা সাধুরা কয় প্রকার জানেন? আসলে, চুল না কাটাকে পার্থিব বন্ধন, আকাঙ্ক্ষা এবং বস্তুগত সুখ ত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন নাগা সন্ন্যাসীরা।
নাগা সাধুদের তপস্যা ও ধ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে চুল না কাটাকে বিবেচনা করা হয়। নাগা সাধুরা শিবের উপাসক। তাঁরও রয়েছে বিশাল জটা। সেই জটাতেই তিনি ধারণ করেন দেবী গঙ্গা এবং শশীকে। সেই দিক থেকেও লম্বা চুক রাখার একটা তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বাস, নাগা সাধুরা চুল কেটে দিলে ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হন। যদি কোনও নাগা সাধু চুল কেটে ফেলে, তাহলে তাঁর সাধনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যতই তপস্যা করুক না কেন, তার আশানরূপ ফল পাওয়া যায় না। তাই নাগা সাধুরা কখনও চুল কাটেন না।
নাগা সাধু হওয়ার প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ এবং জটিল। একজন পূর্ণ নাগা সাধু হতে কমপক্ষে ১২ বছর সময় লাগে। এই সাধু হওয়ার প্রক্রিয়ায় তিনটি ধাপ রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে যিনি নাগা সাধু হন তাকে মহাপুরুষ, দ্বিতীয় পর্যায়ে অবধূত এবং তৃতীয় পর্যায়ে দিগম্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেউ নাগা সাধু হওয়ার আগে তাকে সব চুল বিসর্জন দিতে হয়।
সেই প্রথম সেই শেষ এর পরে সারা জীবনে একবার চুল কাটার অনুমতি পান নাগা সাধুরা। যদি তাঁর দীক্ষা গুরুর মৃত্যু হয়, কেবল তখন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নাগা সাধুরা নিজের চুল কাটেন।
নাগা সাধুদের চারটি প্রকার রয়েছে। রাজেশ্বর নাগা, খুনি নাগা, বরফানি নাগা এবং খিচড়ি নাগা। প্রয়াগরাজের কুম্ভমেলায় দীক্ষা নেওয়া নাগা সাধুদের রাজেশ্বর নাগা সাধু বলা হয়।
উজ্জয়িনী কুম্ভে দীক্ষা নেওয়া নাগা সাধুদের খুনি নাগা সাধু বলা হয়। হরিদ্বারে দীক্ষা নেওয়া নাগাদের বলা হয় বরফানি নাগা সাধু। এঁরা খুবই শান্ত স্বভাবের হয়। নাসিক কুম্ভে দীক্ষা নেওয়া নাগা সন্ন্যাসীদের খিচড়ি নাগা সাধু বলা হয়। (সব ছবি - PTI)