
বন্দুক অনেক রকমের হয়। কোনওটা ছোট পিস্তল আবার কোনওটা বড় স্নাইপার। আবার এমন বন্দুক কিছু কিছু আছে যা চালাতে একাধিক বন্দুকবাজের প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন মেশিন গান। মেশিন গান এতটাই ভারী হয় যে তা হয় কোথাও রেখে অথবা একাধিক বন্দুক বাজ একসঙ্গে চালান। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন্দুক কোনটি জানেন?

শোয়েরার গুস্তাভ ছিল বিশ্বের বৃহত্তম বন্দুক। যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানিতে তৈরি হয়েছিল। এই বন্দুকটির আকার এত বিশাল ছিল যে আপনি জানলে অবাক হবেন। শোয়েরার গুস্তাভের দৈর্ঘ্য ৪৭.৩ মিটার (১৫৫ ফুট), প্রস্থ ৭.১ মিটার এবং উচ্চতা ১১.৬ মিটার। ওজন ছিল ১৩৫০ টন।

বিবরণ শুনেই বুঝতে পারছেন কী বিশাল আকার এবং ভারী ওজন ছিল এর। এটি পরিচালনা করতেও তাই ৫০০ জন লোকের প্রয়োজন হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত এই জার্মান রেল বন্দুকটিই আজ অবধি বিশ্বের সবচেয়ে বড় কামান।

হিটলারের নেতৃত্বে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এই কামান। শোয়েরার গুস্তাভ ফ্রেঞ্চ ম্যাগিনোট লাইনকে ধ্বংস করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এই ফ্রেঞ্চ ম্যাগিনোট লাইনের নেটওয়ার্ক ফ্রান্সের কাছে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফরাসিদের জার্মান আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই ফ্রেঞ্চ ম্যাগিনোট লাইন। ১৯২৮-৪০ এর মধ্যে ফ্রান্স এই লাইনটি গড়ে তুলেছিল।

শোয়েরার গুস্তাভ ছিল যুদ্ধে ব্যবহৃত সবচেয়ে বড় ক্যালিবারের রাইফেলযুক্ত অস্ত্র। এটি ৪৭ কিলোমিটার দূরত্বে ৭ টনের শেল ছুঁড়তে পারত। ট্যাঙ্ক, কামান, থেকে জাহাজ শত্রুদের যে কোনও অস্ত্রকে নিমেষে ধুলিসাৎ করতে পারত এই শোয়েরার গুস্তাভ।

এর মধ্যে করে যে শেল ছোড়া হত তার ওজনই ছিল ৭০০০ কেজি। এই কামানটি প্রতি ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটে একটি করে শেল নিক্ষেপ করতে পারত। অর্থাৎ এটি একদিনে ১৪টি শেল নিক্ষেপের ক্ষমতা ছিল শোয়েরার গুস্তাভ। এই বন্দুক থেকে ছোড়া শেলের আকার ৩১ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।

জার্মানির 'দ্য ক্রুপ ফ্যামিলি কোম্পানি' সুবিশাল এই বন্দুক নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। এটি সেই একই কোম্পানি যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিগ বার্থা কামান তৈরি করেছিল।

যদিও শোয়েরার গুস্তাভ খুব কার্যকর অস্ত্র হিসেবে প্রমাণিত হয়নি। ব্যর্থতার পিছনে বেশ কয়েকটি ছিল। প্রথমত, এটি তৈরি করতে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল। নাৎসিরা পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে তাদের 'বিস্ফোরণ' শুরু করলেও তখনও এই অস্ত্র প্রস্তুত ছিল না।

দ্বিতীয়ত, গুলি চালানোর পর, এটি মেরামত করে ফের একবার গুলিচালানোর জন্য প্রস্তুত করতে প্রায় ২৫০ জন লোকের প্রয়োজন হত। চালাতেও প্রায় ৩০০-৪০০ জন লোক প্রয়োজন হত। এত বিশাল বহরের কারণেই খুব একটা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি শোয়েরার গুস্তাভ।