
কথায় আছে, জগন্নাথ না ডাকলে পুরীর জগন্নাথ দর্শন করা অসম্ভব। তেমনি ঈশ্বরের সাধনায় লিপ্ত হলে ও ডাক এলে তবেই জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন করা সম্ভব হয়। রীতি অনুসারে, এপ্রিলের শুরুতেই সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় বিখ্য়াত চারধাম যাত্রা। হিন্দুধর্মে জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শন করার পুণ্যলাভ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। ধর্ম ও শাস্ত্রে, শিবলিঙ্গ ও জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে মহাদেবের পুজো করা হয়।

অনেকে মনে করেন, শিবলিঙ্গ ও জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। শ্রাবণ মাস হল শিবের মাস। শিবের পুজো সব ভক্তরাই করতে পারেন। শিবলিঙ্গ হিসেবে মহাদেবের পুজো করলেও জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনর সৌভাগ্য সকলের হয় না। শিবলিঙ্গকে সাধারণত শিবের প্রতীক হিসেবে পুজো করে থাকেন।

শাস্ত্রমতে, শিবলিঙ্গ হল শিব-পার্বতীর আদি-অনাদির একক রূপ। শিবলিঙ্গ হল মানবনির্মিত। এর অর্থ হল অনন্ত। শিবপুরাণে বলা হয়েছে যে শিবলিঙ্গ হল ভগবান শিবের রূপ। এই শাস্ত্র অনুসারে ভোলেনাথের গোটা পরিবারই শিবলিঙ্গে বিরাজমান। কথিত আছে, অল্প নৈবেদ্যতেই সন্তুষ্ট থাকেন মহাদেব। তাই শিবলিঙ্গে জল ঢাললেই তুষ্ট হন মহাদেব।

শিবলিঙ্গ প্রতিদিন জল, বেলপাতা, দুধ নিবেদন করলে ভক্তদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ বর্ষিত হয়। শ্রাবণ মাসে শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢাললে পুণ্যলাভ করেন ভক্তরা। অন্যদিকে, জ্যোতির্লিঙ্গ হল মহাদেবের স্বয়ম্ভূু অবতার। শিবের জ্যোতি প্রকট যেখানে যেখানে উদয় হয়েছিল, সেখানে সেখানে জ্যোতির্লিঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে।

পুরাণ অনুযায়ী, জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে দিয়ে মহাদেব এক প্রকাণ্ড আলোকরশ্মি রূপে প্রকট হয়েছিলেন। গোটা দেশে জ্যোতির্লিঙ্গ শুধুমাত্র বারোটি। মনে করা হয়, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের জেরেই পৃথিবীর ভিত্তি বজায় এখনও বিদ্যমান। এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কারণে পৃথিবী এখনও গতিশীল, জীবনযাপন সম্ভব।

অনেকে শিবলিঙ্গ ওজ্যোতির্লিঙ্গকে একই বলে মনে করেন, কিন্তু উভয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক। শিবপুরাণ মতে, শিবলিঙ্গের অর্থ হল অনন্ত। যার শুরু বা শেষ নেই। অনন্ত। শিব-পার্বতীর শ্বাশত রূপ হল শিবলিঙ্গ। এই লিঙ্গ উভয়ের প্রতীক আকারে পূজিত হয়। শিবের প্রতীক হল এই শিবলিঙ্গ।

অন্যদিকে, জ্যোতির্লিঙ্গ মানে স্বয়ং মহাদেব সেই স্থানে জ্যোতি রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভোলেবাবা সেই স্থানে স্বয়ম্ভু অর্থাৎ স্বয়ং আবির্ভূত হন। ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ, বারোটি রাশিচক্রের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, যে ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন পান, সেই ব্যক্তি ভগবান শিবের বিশেষ আশীর্বাদ পেয়ে থাকেন।

বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ কোথায় কোথায় অবস্থিত, জানা আছে? 1. সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ (গুজরাত), নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ (গুজরাত), কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ (উত্তরাখণ্ড), কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ (উত্তর প্রদেশ), মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ (মধ্যপ্রদেশ), ওমকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ (মধ্যপ্রদেশ), ত্রিম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ (মহারাষ্ট্র)।

আরও রয়েছে, সেগুলি হল, ঘূষমেশ্বর জ্যোতির্লিং (মহারাষ্ট্র), ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ (মহারাষ্ট্র), বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ (ঝাড়খণ্ড), মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ (অন্ধ্রপ্রদেশ), রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ(তামিলনাড়ু)।