
জগৎকে ধারণ করেন তিনি, তাই তাঁর নাম দেবী জগদ্ধাত্রী। তাঁর বিশাল রূপ, টানা চোখ, অপরূপ সুন্দর ত্রিনয়ন, চার হাতে শোভা পাচ্ছে অসুর সংহারের জন্য অস্ত্র, দেবী সিংবাহিনী। এই রূপেই পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী। সারা বাংলা জুড়েই বিশাল বিশাল মাতৃ মূর্তির আরাধনা করা হয়।

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর জৌলুসের কাছে হার মানতে বাধ্য সকলেই। মায়াবী আলোর খেলা, সুউচ্চ মূর্তি, সোনা-রুপোর অলঙ্কারে সজ্জিত দেবী। চন্দননগরে দুর্গাপুজোর মতোই পাঁচদিন ধরে চলে জগদ্ধাত্রী পুজো। কিন্তু কী ভাবে শুরু হয়েছিল চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো? জানেন সেই রোমহর্ষক ইতিহাস?

চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো কী ভাবে শুরু হয়েছিল, তা নিয়ে রয়েছে নানা মত। একটি মত বলে, নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলেই শুরু চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। তখন ১৭১০ সাল, কোনও এক কারণে নবাবের হাতে বন্দি হয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। তাই দুর্গাপুজোর সময় মায়ের দর্শন হয়নি তাঁর।

মায়ের পুজোয় না থাকতে পারায় বেজায় মন খারাপ হয় রাজা মশাইয়ের। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে রাজা দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে মায়ের চতুর্ভূজা রূপের আরাধনা করার আদেশ পান রাজা কৃষ্ণচন্দ্র। সেই মতোই কারামুক্ত হয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু করেন দেবী।

আরেকটি মতে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল, ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর হাত ধরে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের ঘনিষ্ঠ ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন ফরাসি সরকারের দেওয়ান। শোনা যায়, কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির পুজোয় অতিথি হিসাবে গিয়েছিলেন তিনি।

কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির সেই পুজো দেখে মুগ্ধ হয়ে যান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী। ইন্দ্রনারায়ণ ছিলেন চন্দননগরের লক্ষ্মীগঞ্জের চাউলপট্টির বাসিন্দা। সেখানেই চাউলপট্টির নিচুপাটিতে ইন্দ্রনারায়ণ প্রথম শুরু করেন জগদ্ধাত্রী পুজো। তবে এই কাহিনী নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অনেকের মতে ১৭৫৬ সালে মৃত্যু হয় ইন্দ্রনারায়ণের, কিন্তু সেই সময় জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল কি না তা নিয়েও মতভেদ রয়েছে।

অন্য মতে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান ছিলেন দাতারাম শূর। দাতারামের বসবাস ছিল ভদ্রেশ্বরের গৌরহাটি অঞ্চলে। জনশ্রুতি, এখানেই আনুমানিক ১৭৬২ সাল নাগাদ দাতারামের বিধবা মেয়ে তাঁর বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেছিলেন। অনেকের মতে এ পুজোতেও অনুদান দিতেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র।

পরবর্তীকালে এই পুজোই স্থানান্তরিত হয় বর্তমানের শিবতলা অঞ্চলে। মাঝে আর্থিক কারণে পুজোটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে গৌরহাটি অঞ্চলের বাসিন্দারা পুজোটির দায়িত্ব নেন এবং সেই পুজোটি আজ এলাকায় পরিচিত তেঁতুলতলার পুজো নামে। যা দেখতে প্রতি বছর ভিড় জমান বহু মানুষ।