
নিজের মায়ের বা বাবার বিয়ে মেনে নেওয়াটা সহজ নয়। কেউ কেউ তা মানতে অস্বীকার করেন। আবার কখনও কখনও ছেলে-মেয়ে তাঁর মা-বাবার কথা ভেবে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের বন্দোবস্ত করেন। সে যাই হোক না কেন মা-বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে তাঁর সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক হয় সৎ বাবা, সৎ মা। সন্তানকে উলটো দিক থেকে তাঁর সৎ ছেলে বা সৎ মেয়ে বলা হয়। এতো গেল সামাজিক বিষয়। কিন্তু আইন কী বলছে?

ধরে নেওয়া যাক আপনি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুত্র সন্তান। সেক্ষেত্রে আপনার মা-বাবার মধ্যে কেউ যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন তাহলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী হবে? কী বলছে আইন? তাঁর বিষয় সম্পত্তির উপরেই বা আপনার কতটা অধিকার? কেউ চাইলে কি সেই সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারেন? এই বিষয়ে জানতেই টিভি৯ বাংলা ডিজিটাল যোগাযোগ করেছিল হাইকোর্টের দুই আইনজীবি অরিন্দম দাশ এবং সহদেব চৌধুরির(নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে। কী বললেন তাঁরা?

সহদেব জানান, হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্জেনশিপ অ্যাক্ট সেকশন ৬ অনুসারে, জন্মদাতা মাতা-পিতাই সব সময় সন্তানের অভিভাবক হবেন। কোনও কারণে দম্পতির মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেলে, সন্তানের বয়স যদি ৫ বছরের কম হয় তাহলে সেই সন্তানের কাস্টডি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা পেয়ে থাকেন।

হিন্দু গার্ডেন্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্টের সেকশন ১৯ অনুসারে, যদি কোর্টে প্রমাণ করা যায় যে সাধারণ বা জন্মদাতা অভিভাবক সন্তানের খেয়াল রাখতে অপারক, সেক্ষেত্রে অভিভাবক ওই সন্তানের কাস্টডি হারাতে পারেন। অন্য কাউকে অভিভাবক হিসাবে দায়িত্ব দিতে পারেন।

সহদেব বাবু বলেন, "এই সবটাই নির্ভর করছে যদি সন্তান নাবালক হয় তবে। সাবালক হয়ে গেলে তখন আর অভিভাবকের প্রশ্ন আসে না।" সে ক্ষেত্রে কোনও প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের মা যদি দ্বিতীয় বিবাহ করেন তাহলে সেই ব্যক্তির সঙ্গে আইনত কোনও সম্পর্ক থাকে না ছেলের।

আইনত কোনও সম্পর্ক না থাকলেও সামাজিক ভাবে মায়ের দ্বিতীয় স্বামী সৎ বাবা হিসাবে পরিচিত হন। সন্তান হবে সৎ পুত্র। তবে যদি বাবা এবং ছেলে দু'জনেই রাজি থাকেন সেক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার পরে সৎ বাবা তাঁর স্ত্রীয়ের প্রথম পক্ষের ছেলেকে দত্তক নিতে পারেন।

অরিন্দম বাবু জানান, কোনও প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের মা দ্বিতীয় বিয়ে করলে মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে আলাদা করে সম্পর্কে কোনও বদল আসে না। কেবল সৎ বাবা বলে সমাজে পরিচয় পান ঠিকই, তবে তার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। এমনকি সৎ বাবার সম্পত্তির উপরেও ছেলের কোনও অধিকার থাকে না। উইল করে সম্পত্তি দিয়ে গেলে বিষয়টা আলাদা।

যদি দু'জনের মধ্যে সম্পর্ক ভাল হয় সেক্ষেত্রে উভয় নিজেদেরক পরিচয় দিতে পারেন। তখন আদালতে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে ছেলেকে দত্তক নিতে হবে সৎ বাবাকে। যদি সন্তান নাবালক হয়, তাহলেও আদালতে গিয়েই তা নথিভুক্ত করতে হবে। মনে রাখবেন যদি বাবা অথবা ছেলে কেউ এই সম্পর্ক মেনে নিতে না চায়, তাহলে ছেলে বাবা হিসাব অস্বীকার করতে পারেন বাবাকে। উলটো দিকে বাবাও ছেলেকে পরিচয় দিতে অস্বীকার করতে পারেন বলেই জানান অরিন্দম বাবু।