
যতদিন চাকরি বা ব্যবসা করছেন ততদিন একরকম। কিন্তু রোজগার বন্ধ হয়ে গেলেও অবসর জীবন যাতে সুষ্ঠ এবং স্বচ্ছলভাবে কাটে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনার। প্রতিদিন বেড়ে চলেছে মুদ্রাস্ফীতি। তাই অবসর জীবনের জন্য এখন থেকেই বিনিয়গ শুরু করা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপার্জন শুরু করার প্রথম দিন থেকেই অবসর জীবনের কথা ভেবে সঞ্চয় শুরু করা উচিত। আর বর্তমান সময়ে সেই সঞ্চয় সম্ভব শুধু মাত্র সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে। আপনিও কি অবসরের পরে মাসিক অন্তত ১ লাখ টাকা করে পেনশন পেতে চান? কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব হবে জানেন?

অবসরের পরে মাসিক অন্তত এক লাখ টাকা পর্যন্ত পেনশন পেতে গেলে ন্যাশানাল পেনশন স্কিম বা এনপিএস এবং ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম বা ইউপিএসের অধীনে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন।

সরকারি নির্দেশিকা অনুসারে ১ এপ্রিল ২০২৫ থেকেই সব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা ন্যাশানাল পেনশন স্কিম এবং ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিতে পারবেন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই ওল্ড পেনশন স্কিমের পরিবর্তে এনপিএস চালু হয়। যার অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের সকল কর্মচারী পেনশন পেতে পারেন। ইউপিএস হল সরকারের নিয়ে আসা নবতম পেনশন স্কিম। যা এপ্রিল ২০২৫ থেকে চালু হবে।

এনপিএস কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত এক ধরনের পেনশন স্কিম। এই প্রকল্পের অধীনে আপনাকে নিয়মিত বিনিয়গ করে যেতে হয়। ৬০ বছর বয়স পেরোলে মাসিক পেনশনের সঙ্গেই একটা বড় অঙ্কের আমানত পান বিনিয়োগকারিরা। এর রিটার্ন নির্ভর করে বাজারের অবস্থার উপরে।

অন্যদিকে ইউপিএস এক ধরনের প্রাইভেট পেনশন স্কিম। বিনিয়োগকারীরা নিজের প্রয়োজন মতো এই প্রকল্পের অধীনে ইনভেস্ট প্ল্যান বেছে নিতে পারবেন। এতে বিভিন্ন কোম্পানির স্কিম রয়েছে। এমনকি বিনিয়োগের উপর রিটার্ন ভিন্ন হতে পারে। UPS-এর অধীনে, সরকার মূল বেতন এবং মহার্ঘ্য ভাতার (DA) উপরে ১৮.৫% দেবে। কর্মচারীর অবদান থাকবে ১০%। যা NPS-এর ক্ষেত্রেও একই।

মনে রাখবেন, এনপিএসে কোনও নির্দিষ্ট পেনশন গ্যারান্টি নেই, অন্যদিকে ইউপিএস গড় মূল বেতনের শতাংশের ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করে। এনপিএসের অধীনে, ইক্যুইটি, ঋণ এবং অন্যান্য বাজার-সংযুক্ত তহবিলে বিনিয়োগের বিকল্প রয়েছে, অন্যদিকে ইউপিএস মূলত সরকারি বন্ড এবং সুরক্ষিত স্কিমগুলিতে বিনিয়োগ করে। এনপিএসের তুলনায় ইউপিএসে সরকারের অবদানও বেশি।

এনপিএসে বিনিয়োগ বাজারের সঙে-সংযুক্ত। ফলে এতে রিটার্ন ঝুঁকিপূর্ণ। বাজার খারাপ থাকলে রিটার্ণ খারাপ হবে। অন্যদিকে ইউপিএস তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ স্কিম। এর অধীনে একটি নির্দিষ্ট পেনশন পাবেন আপনি। প্রশ্ন হল ১ লক্ষ টাকা মাসিক পেনশন পেতে উভয় স্কিমে কত বিনিয়োগ করতে হবে?

ধরে নেওয়া যাক, কেউ ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল ২৫ বছর বয়সে সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেন। ৬০ বছর বয়সে অবসর নিলে, তাঁর চাকরি জীবন হবে ৩৫ বছরের। অবসর গ্রহণের আগের ১২ মাসের গড় মূল বেতন যদি প্রতি মাসে ২ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে UPS-এর অধীনে ৫০% হারে, অর্থাৎ প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা নিশ্চিত পেনশন পাবেন সেই ব্যক্তি। এছাড়াও, UPS-এর মুদ্রাস্ফীতি অনুসারে প্রতি বছর পেনশন বৃদ্ধির বিধান রয়েছে। যদি বার্ষিক ৪.৫ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে নিই, তাহলে ৬১ বছর বয়সে পেনশন হবে ১,০৪,৫০০ টাকা।

যদি কোনও ব্যক্তি ২৫ বছর বয়সে চাকরি শুরু করেন এবং ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন, তাহলে তাকে এনপিএস-এর অধীনে প্রতি মাসে ১৬,৮০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। (১০% কর্মচারী অবদান এবং ১৪% সরকারি অবদান)।

NPS-এ যোগদানের বয়স ২৫ বছর। মাসিক অবদান (কর্মচারী + সরকার) ১৬,৮০০ টাকা। বিনিয়োগের উপর প্রত্যাশিত রিটার্ন যদি ৯ শতাংশ। মোট বিনিয়োগ ৭০.৬ লক্ষ টাকা এবং মোট রিটার্ন ৪.২৭ কোটি টাকা। ক্লোজিং অ্যামাউন্ট ৪.৯৮ কোটি টাকা। পেনশনের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৪০% তহবিল অর্থাৎ ১.৯৯ কোটি টাকা। বিনিয়োগের উপর প্রত্যাশিত রিটার্ন ৬ শতাংশ। এককালীন উত্তোলনের হার ৬০% অর্থাৎ ২.৯৯ কোটি টাকা আপনার পেনশন প্রতি মাসে হবে ১ লক্ষ টাকা হবে। (সব ছবি - Getty Images)