
"প্রতিদিন ঢাকার একটা একটা করে অংশে ঢুকছে পাকিস্তানের সেনা, আর প্রতিদিন এখানকার একটা একটা এলাকা শ্মশানের আকার নিচ্ছে", ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ, আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের অফিসে সিক্রেট টেলিগ্রাম এই ম্যাসেজ গিয়েছিল। ইতিহাস সেই টেলিগ্রামকে চেনে 'ব্লাডি টেলিগ্রাম' নামে। সেই পাক সেনাই আবার ফিরছে বাংলাদেশে?

রক্তাক্ত সেই ছবি ভুলে গিয়েছে আজকের বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়ে বাংলাদেশের রাশ নিজের হাতে নিয়েই ভারত বিরোধীতায় সুর চড়িয়েছেন মহম্মদ ইউনূস। এমনকি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতেও উদ্যত হয়েছে। এবার সেই দিকে আরও এক পা বাড়াল ইউনূস সরকার? পাক সেনার জন্য দরজা খুলে দিল বাংলাদেশ?

সর্বত্রই শোনা যাচ্ছে একটি খবর, বাংলাদেশের সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একটি দলকে। ১৯৭১ সালের ৫৩ বছর পর, পাকিস্তান সেনাবাহিনী আবারও বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈন্যদের প্রশিক্ষণ তত্ত্বাবধান করবেন।

প্রশিক্ষণ নাকি শুরু হবে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপ মোমেনশাহী সেনানিবাসে সেনা প্রশিক্ষণ ও ডকট্রিন কমান্ড সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হবে। এক বছরের মধ্যে প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণ শেষ হবে। পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরও ১০টি কমান্ডকে প্রশিক্ষণ দেবে পাকসেনা।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল শাহির শামশাদ মির্জা গত নভেম্বরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকের-উজ-জামান কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। এরপরেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণের জন্য আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সেনার পক্ষ থেকে এই দাবিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। তাঁরা জানায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশে আসছে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এই বিষয়ে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সেই পোস্টে তাঁরা জানান, 'পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনও প্রশিক্ষক দল বা প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশের কোনও বাংলাদেশের কোনও সেনা নিবাসে প্রশিক্ষণের জন্য আসার পরিকল্পনা নেই। এই দাবি ভিত্তিহীন এবং বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।' প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র কিনবে বলেও বরাত দিয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ৪০,০০০ রাউন্ড গোলাবারুদের বরাত দিয়েছিল। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। গত বছর বাংলাদেশ ১২,০০০ রাউন্ড গোলাবারুদ অর্ডার করেছিল। একই সঙ্গে ২০০০ রাউন্ড ট্যাঙ্কের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামুনেশন এবং ৪০ টন আরডিএক্স-এর বরাত দিয়েছে।

নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে উদ্যত বাংলাদেশ। করাচি বন্দরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। যৌথ মহড়ার নাম দেওয়া হয়েছে 'আমান ২০২৫'। ১৫ বছর পর বাংলাদেশ এমন মহড়ায় অংশ নিচ্ছে। শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশ এমন মহড়ায় অংশ নেয়নি।

প্রসঙ্গত, এর পরেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ দুই দেশের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শিলিগুড়ি করিডরে বাংলাদেশ অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে বলে জানা গিয়েছে। এই করিডর ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে উত্তর পূর্ব অঞ্চলকে যুক্ত করে। পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে তা ভারতের এই অংশে জঙ্গি উপদ্রবের কারণ হতে পারে।