আজকাল নতুন প্রজন্মের মধ্যে অনেকেই বিয়ে বিমুখ। সম্পর্কে জড়ালে, প্রেম করলেও বিয়ে করতে চান না অনেকেই। বদলে, লিভ-ইন করতে চান। অর্থাৎ বিয়ে না করেই স্বামী-স্ত্রীর মতো একসঙ্গে থাকেন। কখনও সেই সম্পর্ক পরিণতি পায়, কখনও আবার ভেঙেও যায়। বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগেও কিছুদিন লিভ-ইন সম্পর্কে থাকেন অনেকে। কিন্তু যদি সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়? সম্পর্ক ভেঙে যায় পিছনে থাকে কোনও গুরুতর কারণ, কোন কোন ধারায় মামলা দায়ের করতে পারেন জানেন?
IPC ৩৭৬ এবং বর্তমান BNSএর ৬৯ ধারা অনুসারে - যদি কোনও পুরুষ বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিভ-ইন করেন এবং পরে মহিলাকে পরিত্যাগ করেন, তাহলে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। আদালত বলেছে যদি কোনও পুরুষের প্রাথমিকভাবে বিয়ে করার কোনও ইচ্ছা না থাকে, তবে তা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
IPC ৪৯৮এ এবং বর্তমানে BNS-এর ৮৫ ধারা অনুযায়ী যদি কোনও মহিলা লিভ-ইন সম্পর্কে মানসিক, শারীরিক বা আর্থিক নির্যাতনের শিকার হন, তাহলে তিনি এই ধারার অধীনে মামলা দায়ের করতে পারেন।
CrPC ১২৫ এবং বর্তমানে BNS-এর ১৩৬ ধারা অনুসারে, যদি কোনও পুরুষ লিভ-ইন সম্পর্কের পরে কোনও মহিলাকে ছেড়ে চলে যায় এবং সেই মহিলা যদি আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হন, তাহলে তিনি ভরণপোষণের দাবি জানাতে পারেন। ২০১১ সালে চানমুনিয়া বনাম বীরেন্দ্র কুমার সিং কুশওয়াহা কেসের রায় দেওয়া আদালত নিজের পর্যবেক্ষণে জানায় দীর্ঘমেয়াদী লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা একজন মহিলাকে স্ত্রীর মতোই সমান অধিকার দেওয়া উচিত।
BNS এর ৮৫ ধারা অনুসারে - যদি কোনও লিভ-ইন সম্পর্কে থাকাকালীন সময়ে ওই যুগলের কোনও সন্তানের জন্ম হয় এবং পুরুষ সঙ্গী তাঁকে দত্তক নিতে অস্বীকার করে, তাহলে মহিলা সন্তানের হেফাজত এবং পিতার সম্পত্তির উপর অধিকার দাবি করতে পারেন মহিলা। পিতৃত্বের অধিকারের দাবিও জানাতে পারেন।
IPC ৩০৬ এবং BNS-এর ১০৭ ধারা অনুসারে যদি কোনও পুরুষ কোনও মহিলাকে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করেন এবং তাঁকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেন, হলে তাও শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
এতো গেল মহিলাদের কথা। তবে নির্যাতনের স্বীকার হন পুরুষরাও। অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয় পুরুষদের। সেক্ষেত্রে তাঁরা কী করবেন?
IPC ১৮২ বএং ২১১ বর্তমানে BNS-এর ৬৫ ধারা অনুসারে, যদি কোনও মহিলা ধর্ষণ বা পারিবারিক হিংসার মামলা দায়ের করেন এবং পরে তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে ওই পুরুষ মহিলার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারেন।
IPC ৩৮৪ এবং বর্তমান BNS-এর ৩১৬ ধারা অনুসারে যদি কোনও মহিলা লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা কোনও পুরুষকে ব্ল্যাকমেইল করেন যেমন তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করা বা টাকা চাওয়া, কোনও কারণ ছাড়া, তাহলে পুরুষরাও এই ধারার অধীনে মামলা দায়ের করতে পারে। এক্ষেত্রে ওই যুগল কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এই মামলা করছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
IPC ৪১৫, ৪১৭ এবং বর্তমান BNS-এর ৩১৭ ধারা অনুসারে, যদি কোনও মহিলা কোনও পুরুষকে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিভ-ইন সম্পর্কে প্রলুব্ধ করেন এবং পরে তাকে প্রতারণা করেন, তাহলে পুরুষটি এই ধারার অধীনে মামলা দায়ের করতে পারেন।
যদি কোনও মহিলা জোর করে, বল পূর্বক কোনও পুরুষের সম্পত্তি দখল করে নেয় বা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়, তাহলে পুরুষ দেওয়ানি মামলা দায়ের করতে পারেন।
লিভ-ইন সম্পর্কে থাকলেও বিরোধ হলে মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই আইনি অধিকার এবং সুরক্ষার সুযোগ রয়েছে। মহিলারা ভরণপোষণ, পারিবারিক হিংসা, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া, শিশু অধিকার ইত্যাদি বিষয়ে মামলা করতে পারেন। পুরুষরাও মিথ্যা অভিযোগ, ব্ল্যাকমেইল, জালিয়াতি, প্রতারণা এবং সম্পত্তি বিরোধের মতো বিষয়ের জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন। (বিঃদ্রঃ - এখানে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র আইনের ধারার উপর ভিত্তি করে লেখা। আরও বিশদে জানতে আদালতে যোগাযোগ করুন। (সব ছবি - Meta AI)