
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: কোথাও কোমরসমান জল। কোথাও বা হাঁটু সমান। কিন্তু, রবিবার মানেই আশাকর্মীদের ঘাড়ে বাড়তি দায়িত্ব। পোলিও টিকাকরণ। কিন্তু জল ডিঙিয়ে পোলিও প্রদান কার্যত অসম্ভব। তবু সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখালেন আশাকর্মীরা। মানবিকতার অন্য ছবি ধরা পড়ল ক্যানিং-এর ২ নম্বর ব্লকে।

টানা বৃষ্টির জেরে কার্যত জলমগ্ন ক্যানিং। সেখানে সারেঙ্গাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিংহেশ্বরীতে এক অভিনব কীর্তির সাক্ষী থাকলেন সকলে। দেখা গেল, জলের মধ্যেই ভাসছে হাঁড়ি। হাঁড়ির ঢাকনাটা অল্প খোলা, ভেতরে শায়িত সদ্যোজাত। পাশে হাঁটু জলে দাঁড়িয়ে বাবা। সেই অবস্থাতেই, হাঁড়ির ঢাকনাটা অল্প সরিয়ে এক স্বাস্থ্যকর্মী একরত্তির মুখে ফেলে দিলেন দুই ফোঁটা পোলিও। সেই ছবি সামনে আসতেই মুহূর্তে ভাইরাল।

রবিবার, কার্যত দেখা যায়, জল ডিঙিয়েই এলাকায় গিয়ে গিয়ে শিশুদের পোলিও টিকাকরণ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ঘটনায়, ক্যানিংয়ের ২ নম্বরে ব্লকের বিডিও প্রণব মণ্ডল বলেন, "স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবলকে কুর্নিশ। চতুর্দিক জলে ভাসছে। এভাবে যে বাড়ি বাড়ি টিকাকরণ সম্ভব তা ওঁরা কাজে করে দেখালেন।"

পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধে দুই ধরনের টিকা বিদ্যমান। ক. সল্ক ভ্যাকসিন (Salk vaccine), অপরনাম কিল্ড ভ্যাকসিন বা নিষ্ক্রয় টিকা(IPV)। খ. সেবিন ভ্যাকসিন (Sabin vaccine), অপরনাম লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিন, ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন(OPV)

দুটি টিকায় তিনটি সেরোটাইপ রয়েছে। উভয় টিকায় হিউমোরাল অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা রক্তে প্রবেশকৃত ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে, ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র রক্ষা পায় এবং রোগ প্রতিরোধ হয়। পোলিও মূলোৎপাটনে লাইভ ভ্যাকসিন বেশি কার্যকর তাই ভারতীয় উপমহাদেশে মনোভ্যালেন্ট ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়।

ওরাল পোলিও ভ্যাকসিনের একটি সুবিধা হচ্ছে এটি অন্ত্রে সিক্রেটরি ইমিউনোগ্লোবিউলিন -এ (IgA) তৈরি করে যা ভিরুলেন্ট (রোগ সৃষ্টিকারী) পোলিও ভাইরাস কে নিষ্ক্রিয় করে এবং রোগীর দেহ থেকে অন্যের শরীরে ছড়ানো রোধ করে। এর ফলে একটি সম্প্রদায়ের একাংশ কে টিকা প্রদানের মাধ্যমে পুরা সম্প্রদায়ের সমগ্র জনগণ কে রোগের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব যা হার্ড ইমিউনিটি (Herd immunity) নামে পরিচিত।