মহাকুম্ভ শেষ হতে বাকি আর এখনও ১৬ দিন। তবে রাজকীয় স্নানের তিথি পড়ে রয়েছে মাত্র দুটি। একটি সামনেই ১২ ফেব্রুয়ারি, মাঘী পূর্ণিমার পুণ্যলগ্নে এবং অপরটি মহাকুম্ভের শেষ দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি। সেই দিন আবার পড়েছে মহাশিবরাত্রিও।
মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে পুণ্যস্নান করতে ফের কোটি কোটী ভক্ত ভিড় করছেন সঙ্গমনগরী প্রয়াগরাজে। কিছুদিন আগেই মৌনী অমাবস্যায় পুণ্য স্নানের সময়, ভক্তদের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে বহু পুণ্যার্থীর। সরকারি তথ্য বলছে মৃত্যু হয়েছে, ৩০ জনের এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৬০ জন। মাঘী পূর্ণিমাতে যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তাই আগে থেকেই সচেষ্ট যোগী প্রশাসন। সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রয়াগরাজ সঙ্গম রেল স্টেশন। সড়ক পথের অবস্থা আরও খারাপ।
প্রয়াগরাজের ৩০০ কিলোমিটার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে লম্বা জ্যাম। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ২ কিলোমিটার রাস্তা যেতে সময় লেগে যাচ্ছে প্রায় ২ ঘন্টা। গাড়ি নিয়ে বাইরে থেকে যাওয়া আরও চাপের বিষয়। ইউ টার্ন নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেক গাড়ি। মাঝপথে দাঁড়িয়ে রয়েছে কোটি কোটি ভক্ত। কিন্তু প্রশ্ন হল এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবে পুণ্যস্নান করবেন? কী ভাবে ভিড় না ঠেলেই সহজে পৌঁছতে পারবেন ত্রিবণী সঙ্গমে?
কালীঘাট হয়ে - সরাসরি সঙ্গমে যাওয়া আর ভগবানের দেখা পাওয়া এখন মোটামুটি একই ব্যাপার। তাই সেই রাস্তা ছেড়ে দিন। প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন সাময়িক বন্ধ। সব ট্রেন ঘুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রয়াগরাজ জংশন স্টেশন দিয়ে। আপনিও যদি ট্রেনে করে যান তাহলে গিয়ে প্রয়াগরাজ জংশনে নামুন। এবার সেখান থেকে অটো বা টোটো ভাড়া করে সোজা চলে যান কালীঘাট। এখানে স্নান করবেন না। কালীঘাট যমুনা নদীর একটি পাড়।
কালীঘাট থেকেই পেয়ে যাবেন অনেক ভাড়ার নৌকো। একেক একেক জনের খরচ পড়বে ৫০০-৭০০ টাকা। তবে দরদাম করতে পারলে তা আরও কমতে পারে। মনে রাখবেন এই ভাড়া, কেবল শেয়ার নৌকোর জন্য প্রযোজ্য। এই ভাবে খুব সহজেই ভিড় ছাড়াই আপনি স্নান করে ফিরে আসতে পারেন ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে। আসা-যাওয়া, ১ ঘন্টার স্নান করা মিলিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টার মধ্যেই আপনি স্নান সেরে নিতে পারবেন। কালীঘাট থেকে ত্রিবেণী সঙ্গমের দূরত্ব জলপথে মাত্র ১০ কিলোমিটার।
আরেল ঘাট দিয়ে - প্রয়াগে পৌঁছে অনায়াসে আপনি প্রচুর টোটো বা অটো পেয়ে যাবেন আরেল ঘাট যাওয়ার জন্য। আপনি প্রয়াগ শহরে ঢুকলেই আরেল ঘাট যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রচুর অটো বা টোটো পেয়ে যাবেন যার খরচ পড়বে মাথা পিছু ৫০-৮০ব টাকা। আরেল ঘাটে পৌঁছে আপনি একই ভাবে নৌকো ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারেন ত্রিবেণী সঙ্গমে। সেখানে নেমে সেরে নিতে পারবেন পুণ্যস্নান।
ত্রিবেণী সঙ্গমের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত আরেল ঘাট। এখান থেকে ত্রিবেণী সঙ্গমের দূরত্ব কালীঘাটের তুলনায় আরও কম। ভাড়াও কম পড়তে পারে। তবে কালীঘাটের তুলনায় এই ঘাটে লোক সংখ্যা সামান্য হলেও বেশি। খুব বেশি ভিড় ঠেলার প্রয়োজন হবে না। আরেল ঘাট থেকে ত্রিবণী সঙ্গমে পৌঁছানোর জন্য অস্থায়ী ব্রিজ বানানো হয়েছে। সেটিও ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি যদি কোনও ভাবে গাড়ি নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজে পৌঁছে গিয়ে থাকেন তাহলে তো কথাই নেই। কোনও ভিড় ছাড়াই সঙ্গমে গাড়ি রেখে স্নান করতে পারবেন। কী ভাবে জানেন? প্রয়াগরাজকে মোট ২৫ সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভিড় ছাড়া স্নান করার সবচেয়ে ভাল জায়গা হল ২৪ নম্বর সেক্টর।
আপনাকে দিল্লি থেকে চিত্রকূট হয়ে যে রাস্তাটি সোজা প্রয়াগে যায় সেই রাস্তা হয়ে প্রয়াগে প্রবেশ করুন। আরেল নামক জায়গায় রয়েছে সোমেশ্বর মন্দির। ভোর ৪-৫ টার মধ্যে পৌঁছতে পারলে সেই মন্দিরের সামনে ঘাটে, গঙ্গা থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে গাড়ি রেখে সেরে নিতে পারবেন গঙ্গা স্নান। (সব ছবি - PTI)