
'অপারেশন সিদুঁর' আর ভারতের কব্জির জোর এই মুহূর্তে দেখছে গোটা বিশ্ব। ভারতীয় স্থল-জল-বায়ু সেনার দাপটে থরথর করে কাঁপছে পাকিস্তান। মাত্র ৭২ ঘণ্টাতেই এমন অবস্থা হয়েছে যে কার্যত বাটি হাতে সাহায্য চাইতে হচ্ছে অনান্য দেশের কাছে। শোনা যাচ্ছে নিজের সেনার হাতে বন্দি সেনা প্রধান আসিফ মুনির। বাঙ্কারে নাকি লুকিয়ে রয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের একের পর এক হামলার ছক বানচাল করে দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। এই সব কিছুকে সামনে থেকে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরা হলেন ৩ বাহিনীর ৩ প্রধান।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, এয়ার মার্শাল অমর প্রীত সিং, অ্যাডমিরাল দীনেশ কুমার ত্রিপাঠি এই ৩টি নামের ভয়ে বর্তমানে থরহরি কম্পমান বাংলাদেশের। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছে সব ঠিক থাকলে একদিন যে 'অপারেশন সিঁদুরের মতো কিছু একটা হবে তা বোঝা গিয়েছিল ১৯৮৪ সালেই। কেন এক ঝটকায় ৩৬ বছর পিছিয়ে যাওয়া?

আসলে এই তিন সেনাপ্রধানের গল্প শুরু হয়েছিল আজ থেকে ৩৬ বছর আগে। ন্যাশানাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি বা এনডিএতে। আজ যাঁদের কাঁধে ভরসা করে পাকিস্তানকে নিজের অওকাত বোঝাচ্ছে ভারত, ১৯৮৪ সালে এক সঙ্গে পথচলা শুরু করেছিলেন সেই ৩ ব্যক্তি। 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সাফল্যের পেছনে, তিন সেনাপ্রধান একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং তাঁদের শক্তিশালী নেতৃত্ব। আসলে কারা এই ৩ সেনাপ্রধান? কী ভাবে তাঁদের পরিচয়?

ভারতীয় সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর নেতৃত্বে ভারত 'অপারেশন সিঁদুর' শুরু করে। মধ্যপ্রদেশের রেওয়াতে জন্মগ্রহণকারী জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী সৈনিক স্কুল রেওয়া এবং এনডিএ খাদকওয়াসলায় পড়াশোনা করেছেন। তিনি এনডিএতে ব্লু অ্যাওয়ার্ড এবং আইএমএ দেরাদুনে স্বর্ণপদক পেয়েছেন।

১৯৮৪ সালে কমিশন লাভের পর, জম্মু ও কাশ্মীর, এলএসি এবং উত্তর-পূর্বে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০২৪ সালের ৩০ জুন তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় ব্যাপক হামলাও চালিয়েছে।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, এয়ার মার্শাল অমর প্রীত সিং ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান (CAS) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালের ২৭ অক্টোবর জন্ম নেওয়া অমর প্রীত সিং খাড়কওয়াসলার জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমি (এনডিএ) থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তিনিও ১৯৮৪ সালের এনডিএ ব্যাচে ছিলেন। সেই ব্যাচে ছিলেন সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী এবং নৌবাহিনী প্রধান দীনেশ ত্রিপাঠিও।

এয়ার মার্শাল অমর প্রীত সিং একজন অভিজ্ঞ ফাইটার পাইলট। মিগ-২১, মিগ-২৯ এবং সুখোই-৩০ এমকেআই-এর মতো ফাইটার বিমানও উড়িয়েছেন। তিনি একজন ফ্লাইং প্রশিক্ষক এবং টেস্ট পাইলটও ছিলেন, যার কারণে তাঁর প্রযুক্তিগত দখল খুবই শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। ওয়েলিংটনের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ (DSSC) এবং নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (NDC) থেকে উচ্চ-স্তরের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন অমর।

অ্যাডমিরাল দীনেশ কুমার ত্রিপাঠি ৩০ মে ২০২৪ নৌবাহিনীর প্রধান (সিএনএস) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালের ১৫ মে উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে জন্ম নেন দীনেশ কুমার ত্রিপাঠি। একটি সরকারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন, তারপর ১৯৭৩ সালে সৈনিক স্কুল রেওয়াতে যোগদান করেন। সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদীর সঙ্গে তাঁর আলাপ এই স্কুল জীবনেই। দু'জনেই ব্যাচমেট ছিলেন।

এরপর, তিনি পুনের জাতীয় প্রতিরক্ষা একাডেমি (এনডিএ) এবং এঝিমালার ভারতীয় নৌ একাডেমি থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ত্রিপাঠী DSSC ওয়েলিংটনে স্টাফ কোর্সে পদক জিতেছেন এবং নিউপোর্টের ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজে প্রশিক্ষণও পেয়েছেন। তিনি পশ্চিম নৌ কমান্ডের কমান্ডার এবং নৌবাহিনীর উপ-প্রধান (২০২৩-২৪) হিসেবে নীতি ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তাঁকেই। সব ছবি - PTI