পরাজিত আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল, পরাজিত দিল্লির প্রাক্তন উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়াও। সকাল থেকেই ভোট গণনার ট্রেন্ড বলছে গেরুয়া শিবিরের মসনদে বসা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বুথ ফেরত সমীক্ষার হিসাব মিলিয়েই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রায় আড়াই দশক পর ফিরছে বিজেপি। এমন পরিস্থিতি একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বার বার। ২৭ বছর পরে দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী হবেন বিজেপির প্রতিনিধি। কিন্তু কে সেই ব্যক্তি?
অনান্য সব রাজ্যের মতোই দিল্লিতেও বিধানসভা ভোটে বিরোধিতা করার সময় বিজেপির তরফে কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছিল না। এখানেও ভোট হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নামেই। যা নিয়ে বার বার আক্রমণ শানিয়েছিল আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল। তবে এবার সেই সব উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে।
রাজনীতির জটিল অঙ্ক বলছে দিল্লির গদিতে বসার দাবিদার কোনও একজন নয়। একাধিক বিজেপি নেতা রয়েছেন যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ম্যারাথনে নেমে পড়েছেন। কে কে তাঁরা? কী বলছে রাজনীতির সমীকরণ? এগিয়ে কে পিছিয়ে বা কে?
দুষ্যন্ত কুমার গৌতম - দিল্লির করোলবাগ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচন লড়েছেন তিনি। তিনি বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদকও। সাংগাঠনিক দিক থেকে দলে গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, তবে বিজেপির দলিত মুখ হিসাবে বিশেষ ভাবে পরিচিত তিনি। অন্যদিকে সূত্র বলছে অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ তিনি। যদিও একাংশের মত বিজেপির 'এক পদ এক নীতি' মানলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীত্বের দৌড় থেকে ছিটকে যেতে পারেন।
বিজেন্দ্র গুপ্ত - দিল্লির রোহিণী বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তিনি। এই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক তিনি। কংগ্রেসের সুমেশ গুপ্ত এবং আম আদমি পার্টির প্রদীপ মিত্তলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দিল্লিতে 'আপ ঢেউ'য়ের মধ্যেও যে কজন বিজেপি নেতা দাপটের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই বিজেন্দ্র গুপ্ত। এক সময়ে দিল্লি বিজেপির রাজ্য সভাপতি এমনকি বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার গুরুদায়িত্ব সামলেছেন। এখন সেই পরিশ্রমের কী ফল পাবেন, তা বলবে সময়। দুপুর ২:৩০ অবধি নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে তিনি।
রমেশ বিধুরী - মুখ্যমন্ত্রী দৌড়ে কিন্তু আছেন গুজ্জর সম্প্রদায়ের এই বিজেপি নেতাও। প্রবীণ এই নেতা বিজেপির পুরনো নেতাদের মধ্যে অন্যতম। বিজেপির হয়ে লোকসভা ভোটেও লড়েছেন তিনি। এই বারে তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন দিল্লির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। যদিও অতিশীকে পিছনে ফেলে দিলেও শেষে পরাজিত হয়েছেন তিনি। সেই হিসাবে খানিকটা হলেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে গিয়েছেন তিনি।
প্রবেশ ভার্মা - দিল্লি নির্বাচনে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মুখ কিন্তু তিনিই। বিজেপি নয়াদিল্লি আসন থেকে অরবিন্দ কেজরীবালের বিরুদ্ধে পরবেশ ভার্মাকে প্রার্থী করেছিল। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাহেব সিং ভার্মার সুযোগ্য পুত্র তিনি। পশ্চিম দিল্লি থেকে দু'বার সাংসদ হয়েছিলেনব তিনি। এই ভোটে আপ প্রধান খোদ অরবিন্দ কেজরীবালকেই নয়াদিল্লি কেন্দ্রে পরাজিত করেছেন তিনি। দিল্লি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিতের পুত্র কংগ্রেস প্রার্থী সন্দীপ দীক্ষিতকেও হারিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক মহল সূত্রের খবর, দিল্লির মসনদে বসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে তিনিই।
মনোজ তিওয়ারি - ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্তর দিল্লি আসন থেকে ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন তিনি। এই নিয়ে টানা ৩ বার সাংসদ মনোজ। ২০২৪ সালে, বিজেপি দিল্লির ৭ জন সাংসদের মধ্যে ৬ জনকে টিকিট দেয়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবু টিকিট পেয়েছিলেন মনোজ। দিল্লির নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখা গিয়েছিল তাঁকে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আছেন এই অভিনেতা-রাজনীতিবিদ।
বীরেন্দ্র সচদেব - ২০২২ সাল থেকে দিল্লি বিজেপির কার্যকরী সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৩ সালে পূর্ণ-সময়ের সভাপতি নিযুক্ত করা হয় বীরেন্দ্র সচদেবকে। দিল্লি বিজেপির আভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ২৭ বছর পর ক্ষমতায় ফেরার ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্ব কিছু কম নয়। যদিও ভোটে জিতলে মুখ্যমন্ত্রী কে হতে পারেন, এই প্রশ্নের উত্তরে বার বার তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত নেবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি এই বদান্যতাই তাঁর কাছ বর হয়ে ফিরে আসে কি না সেটাই দেখার। যদিও তিনি ভোটে লড়েননি, তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সদয় হলে সেটা কোনও বাঁধা নয়।