
সব দেশেই একটি নির্দিষ্ট আচার-বিধি রয়েছে। বিশ্বের সব দেশেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের প্রথম দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়। বাঙালিদের মধ্যেও রয়েছে সেই বিশেষ দিন। সেই উজ্জ্বল উত্সবের নাম হল নববর্ষ। বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটি বাংলা মতে নববর্ষ পালন করা হয়।

সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বারো মাস অনেক কাল আগে থেকেই পালিত হয়ে আসছে। পয়লা বৈশাখ সাধারণত একটি ঋতুকালীন উৎসব হিসেবে পালিত হয়। এর কারণ হল কৃষিকাজ। সারাবছর ফসল যাতে ভালোভাবে ফলন হয়, তার জন্য এই দিনটি আরও গুরুত্ব পেয়ে থাকে। গ্রীষ্মের প্রখর তাপে বৃষ্টির সম্ভাবনা বৃদ্ধির অন্য নাম হল এই নববর্ষ।

হালখাতা হল পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি উৎসব যেখানে গত বছরের সমস্ত হিসেব-নিকেশ শেষ হয়। ও সেই দিন থেকেই একটি নতুন খাতা খোলা হয়। বাঙালি ব্যবসায়ী, দোকানদারেরা এই নতুন খাতা খোলেন মিষ্টিমুখ, পুজোর মাধ্যমে।

হালখাতা খোলার সময় স্বস্তিক চিহ্ন আঁকেন অনেকে। তবে বাঙালিদের কাছে মঙ্গল চিহ্ন আরও গুরুত্বপূর্ণ। বাঙালিদের কাছে এই মঙ্গল চিহ্ন মাটির বা পেতলের ঘটের উপর সিঁদুর দিয়ে লেখা হয়। পুজো, শুভ অনুষ্ঠানের এই মঙ্গল চিহ্ন আঁকা হয়। একে আবার বাঙালির শাশ্বত প্রতীক পুত্তলিকাও বলা হয়।

এই শুভ চিহ্ন নতুন নয়, প্রায় সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শনে দেখা গিয়েছে। কোনও পুতুল বা মানুষের নয়, এটি দেবী লজ্জা গৌরীর মূর্তির আদলে নির্মিত। তিনি পুরাণ মতে মাতৃকাদেবী।

দুই হাঁটু উপরে, দুই হাঁটু থেকে বাঁকানো পা। দেবী পরমেশ্বরের মূর্তি। পুরাণ মতে, এই চিহ্ন আসলে ফসলপ্রদানকারী, বংশরক্ষার দেবী। প্রজননের চিহ্ন। সন্তান জন্মদানের মূর্তি এটি। এই চিহ্ন কাম্যাক্ষা মন্দিরেও দেখা যায়।

যদি ভালো করে দেখা হয় তাহলে এই মূর্তির অবয়বের মূর্তির নিচে পাঁচটি ফোঁটা থাকে। হিন্দু ধর্মে পাঁচ মুখ্য মতবাদের মুখ দেবতাদের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয়। এই চিহ্ন না দিলে পুজো বা শুভকাজ অসম্পূর্ণ থাকে। এই পাঁচটি বিন্দু হল- গণেশ, সূর্য, বিষ্ণু, শিব ও জয়দূর্গা বলে মনে করা হয়।

অনেক বিশিষ্টদের মতে, এটি পরমেশ্বরের পালনকর্তা রূপের স্বরূপ। ভগবান বিষ্ণুর চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়। মঙ্গল ঘটটিকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ও মানব দেহের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। পঞ্চদেবতা বা পরমেশ্বরের পাঁচ রূপকেই এখানে বর্ণিত করা হয়।

নববর্ষ মানে বছরের প্রথম দিন হিসেবে পালন করা হলেও এদিন উর্বরতার দেবী লজ্জা গৌরীরও পুজো করা হয়। এদিন পরমেশ্বরের এই পুত্তলিকা চিহ্ন বাঙালির সংস্কৃতি, মননের সঙ্গে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছে।