TV9 Bangla Digital | Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী
Dec 25, 2022 | 9:48 PM
৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২। সমাপ্তি ঘটে বিশ্বের ইতিহাসের এক বর্ণময় অধ্যায়ের। এ দিন প্রয়াত হন সবচেয়ে বেশি দিন ব্রিটেনের রাজ-গদিতে থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বাকিংহাম প্যালেস থেকে রানির মৃত্যুর খবর আসার পরই শোকের ছায়া নামে ইংল্যান্ডজুড়ে। শোকস্তব্ধ বিশ্বনেতারাও। রানির বিদায়ে ২০২২ সালটি অন্য মাত্রা পায়। ইতিহাসের ক্যালেন্ডারে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ২০২২।
স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে চিরনিদ্রায় চলে যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। রানির মৃত্যুর পর ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়।
১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ওয়েস্টমিনস্টারে অ্যাবে থেকে বাকিংহ্যাম প্যালেস, রাজকীয় নিয়মে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়ে প্রথা মেনেই উইন্ডসর ক্যাসেলের অন্দরে ষষ্ঠ কিং জর্জের চ্যাপেলে সমাধিস্ত করা হয় ‘দ্য লংগেস্ট লিভিং মনার্ক’কে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে ঘিরে সাধারণ মানুষের আগ্রহের অভাব ছিল না। কারণ একাধিক ইতিহাসের সাক্ষী তিনি। ব্রিটেনের রাজগদিতে থাকাকালীন ভেঙেছেন একাধিক রেকর্ডও।
রানি এলিজাবেথ বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে ছিল না কোনও স্কুল-কলেজের ডিগ্রি।
রানি তাঁর জীবনে কোনওদিন রান্নাঘরের মুখ দেখেননি। মাত্র ২৫ বছর বয়সে বসেছিলেন রাজগদিতে। তাঁর স্বামী ফিলিপ ভালবেসে রানির জন্য ওমলেট বানিয়ে আনলেও, রেঁধে ভালবাসা ফেরত দিতে পারেননি রানি।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর নিজের তিন সন্তানেরই বিবাহবিচ্ছেদ হতে দেখেছেন।
রানি মদ্যপান করতেও ভালবাসতেন। নির্দিষ্ট ঘড়ি ধরে পান করতেন মদ। দিনে ছয়বার মদ খেতেন তিনি। কোন সময় কোন মদ খাবেন, তাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল।
দ্য় লংগেস্ট লিভিং মনার্ক বলা হয় রানি দ্বিতীয় ভিক্টোরিয়াকে। কারণ তিনিই ব্রিটেনের রাজগদিতে সর্বোচ্চ সময় ক্ষমতায় ছিলেন। বিগত ৭০ বছর ধরে তিনি ব্রিটেন সহ ১৫টি কমনওয়েলথ দেশ তাঁর শাসনে ছিল।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও যেমন দেখেছেন, তেমন বর্তমান বছরের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধও দেখেছেন।
রানিকে ঘিরে বিতর্কও কম ছিল না। পুত্রবধূ ডায়নার সঙ্গে ছেলে চার্লসের বিচ্ছেদ ও তারপরই পথ দুর্ঘটনায় ডায়নার মৃত্যুর পিছনে যেমন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভূমিকা ছিল বলে মনে করেন অনেকে, তেমনই রাজপরিবারের সদস্য হিসাবে মেগান মর্কেলকে গ্রহণ না করা, কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় রাজপরিবারের অন্দরেই মেগানের বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়ার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পরই ৭৩ বছর বয়সে ব্রিটেনের রাজগদিতে বসেন তাঁর পুত্র চার্লস।১৯৫৮ সাল থেকে প্রিন্স অব ওয়েলস ছিলেন তিনি। রাজগদিতে বসার পরই এই উপাধি পান কিং চার্লসের বড় ছেলে উইলিয়ামস।
উইলিয়াম যেমন প্রিন্স অব ওয়েলস হন, তেমনই তাঁর স্ত্রী কেট মিডলটন পান প্রিন্সেস অব ওয়েলস উপাধি। শেষবার এই উপাধি ব্যবহার করেছিলেন চার্লসের প্রাক্তন স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়না। রহস্যজনক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যুর পরই ব্রিটেনের রাজ পরিবারের কেউ আর এই উপাধি ব্যবহার করেননি সম্মান জানিয়ে। তবে সেই রীতি ভেঙে কেট জানান, ডায়নার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই তিনি এই উপাধি ব্যবহার করবেন।
ব্রিটেনের রানির মৃত্যুতে পুনরায় একত্রিত হয় রাজপরিবার। রানির ছোট নাতি প্রিন্স হ্য়ারি অভিনেত্রী মেগান মর্কেলকে বিয়ে করার বছর খানেক পরই রাজ পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে যান। তবে রানির শেষকৃত্যে ফের একবার রাজপরিবারের বাকি সদস্যদেরও সঙ্গে দেখা যায় তাঁদেরও। জল্পনা শুরু হয় রাজপরিবার জোড়া লাগার।
রানির মৃত্যুর পরই দাবি ওঠে ভারত থেকে চুরি যাওয়া কোহিনূর হিরে ফেরত দেওয়ার।
ব্রিটেন ও কমলওয়েলথের অধীনে থাকা অনেক দেশও দাবি তোলে রাজশাসন থেকে বেরিয়ে আসার।