বাঙালিদের কাছে ভাইফোঁটার (Bhai Phota 2022) গুরুত্বটাই আলাদা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উত্সবের মধ্যে ভাইফোঁটা হল অত্যন্ত শুভ ও তাত্পর্যপূর্ণ। ভেদাভেদ ভুলে ভাইদের আপন করে নেন বোনেরা। মঙ্গল কামনা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে ভাইয়ের কপালে এদিন ফোঁটা দেন দিদি-বোনেরা। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে বাঙালির ঘরে ঘরে এই অনুষ্ঠানটি পালিত হয়। যতদূরেই থাকুক না কেন, ভাইফোঁটার দিন দিদি বা ভাইয়ের প্রতি গভীর ভালবাসায় একটু টান ধরে। সম্পর্কে চিড় ধরলেও একে অপরের প্রতি ভালবাসার ঘাটতি অনুভব হবেই হবে। অটুট বন্ধনের এক পবিত্র উত্সব এটি। যমের কুনজর থেকে ভাইকে রক্ষা করার জন্যই এই আচার-অনুষ্ঠান। ভাইদের দীর্ঘায়ু কামনার উদ্দেশ্যে বোনেরা নানা রীতি ও নিয়ম পালন করে ফোঁটা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এদিন ফোঁটা হিসেবে শুধু চন্দন নয়, থাকে কাজল, দইয়ের ফোঁটাও। সঙ্গে নিয়ম মেনে ভাইফোঁটার ছড়া উচ্চারণ করেন দিদি-বোনেরা।
কিন্তু কেন এই তিনটি জিনিস দিয়ে ফোঁটা দেওয়া হয়, তা জানেন কি? হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, যে কোনও শুভকাজে চন্দ্ন, কাজল ও দই অত্যন্ত শুভ। কপালে চন্দনের ফোঁটা দেওয়া হলে মস্তিষ্ক থাকে ঠান্ডা ও শান্ত। এছড়া চন্দনের ফোঁটার গুণে ধৈর্যশক্তি, মনোযোগ বৃদ্ধি, একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়। শুধু ভাইফোঁটাতেই নয়, অন্নপ্রাশন, বিবাহ, পৈত্যে, যে কোনও পুজো-পার্বনে চন্দনের ফোঁটার গুরুত্ব রয়েছে। কপালে তিলক বা ফোঁটা দেওয়া হলে ভগবানেক প্রতি মন নিবিষ্ট রাখা যায়। তাই প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময়েও ঋষি-সন্ন্যাসীরা কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে আঁকেন।
হিন্দু ধর্মে কাজল হল অত্যন্ত শুভ। শিশু বয়স থেকেই পায়ে, কপালের পাশে কাজলের তিলক বা ফোঁটা দেওয়ার রীতি রয়েছে এখনও। বিশ্বাস করা হয়, কাজলের তিলক কালে অশুভ শক্তির প্রভাব পড়ে না, কুনজর থেকে রক্ষা করা যায়। তাই এদিন ভাইয়ের কপালে কাজলের ফোঁটা দেওয়া হয়। চন্দন, কাজল ছাড়াও রয়েছে দইয়ের ফোঁটা। হিন্দু ধর্মে দইকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এজন্য যে কোনও শুভ কাজে দইয়ের ব্য়বহার অত্যন্ত গুরুতর। বিয়ে, অন্নপ্রাসন, জন্মদিন, গৃহপ্রবেশ, যে কোনও পুজো-অনুষ্ঠানে দই উপহার হিসেবেও দেওয়া হয়ে থাকে।
ভাইফোঁটার মন্ত্রটি মনে আছে? যদি মনে না থাকে, তাহলে একবার চোখ বুলিয়ে নিন…
‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥ যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর। আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥’
পুজোর থালিতে থাকে ধান, দুর্বা, শঙ্খ, প্রদীপ, মধু ইত্যাদি। ফোঁটা দেওয়ার সময় ভাইয়ের মাথায় বাম হাতে করে তিনবার ধান-দুর্বা তুলে দেওয়া হয়। নিজের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে উপরের মন্ত্রটি পড়তে পড়তে তিনবার ফোঁটা দিয়ে দেয়।