দুর্গাপুজো শেষ হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় কালীপুজোর প্রস্তুতি । কালীপুজো বাংলায় বেশি প্রাচীন পুজো নয়। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র প্রথম কালীপুজো আরম্ভ করেন। তারপর থেকেই সারা বাংলায় ধুমধাম করে শ্যামাপুজোর আরাধনা করা হয়। তবে বাংলার কালী আরাধনার মাহাত্ম্য পুরাণে উল্লেখ করা আছে। রয়েছে বেশ কয়েকটি সতীপীঠও। ব্রহ্মযামল নামক তন্ত্রগ্রন্থের মতে, কালী বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত কালীমন্দিরটি হল কালীঘাট মন্দির। এটি একটি সতীপীঠ। এছাড়া দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, আদ্যাপীঠ, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি ইত্যাদি কলকাতা অঞ্চলের বিখ্যাত কয়েকটি কালী মন্দির। শান্তিনিকেতনের কাছে কংকালিতলা, কালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, তারাপীঠ এর কালীমন্দির, জয়নগরের ময়দা কালীবাড়ি ও ধন্বন্তরি কালীবাড়ি, হালিশহরের রামপ্রসাদী কালী মন্দির ইত্যাদি হল পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কয়েকটি কালীমন্দির। এছাড়া আসামে কামাখ্যা, ত্রিপুরাতে ত্রিপুরেশ্বরী কালীমন্দির সতীপিঠ ও বিশেষ জনপ্রিয় কালী মন্দির, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত রমনা কালীমন্দির খুবই প্রাচীন একটি কালীমন্দির। চট্টেশ্বরী কালী মন্দির ও ৫১ শক্তিপীঠের একটি। ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির নতুন দিল্লি কালীবাড়ি একটি ঐতিহ্যপূর্ণ কালীমন্দির। বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় প্রায় চারশ বছরের পুরনো বার্থী তাঁরা মায়ের মন্দির রয়েছে।
কালী পুজোর সময় মায়ের যে ভোগ হয় তা অন্যান্য পুজোর থেকে বেশকিছুটা আলাদা। স্থান বিশেষে নিরামিষ ভোগের সঙ্গে মায়ের পুজোতে আমিষ ভোগও থাকে। নিরামিষ ভোগের মধ্যে যেমন থাকে অন্ন ভোগ, পোলাও ভোগ – সাদা ভাত, খিচুড়ি, শুক্ত, শাক, ডাল, পাঁচ রকম ভাজা, পাঁচমিশালী তরকারি, আলু পটোলের তরকারি, ফুলকপির তরকারি, লুচি, ছানার তরকারি, খেজুরের চাটনি, পায়েস, মিষ্টি ৷ আমিষ ভোগে কালীকে নিবেদন করা হয় যেকোনও আঁশযুক্ত মাছ রুই মাছ, কাতলা মাছ, ইলিশমাছ, চুনো মাছের টক, পোড়া শোলমাছ মাখা আর পিয়াঁজ রসুন ছাড়া নিরামিষ কচি পাঁঠার মাংস ৷ প্রাচীন রীতি মেনেই ভোগ রান্না হয়ে থাকে রাজ্যের তিন অন্যতম কালীতীর্থে। দক্ষিণেশ্বর, কালিঘাট এবং তারাপীঠের মতো কালীতীর্থে যাবতীয় রীতিনীতি মেনেই পুজো এবং ভোগ নিবেদন করা হয়।
দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির- ভোরে দেবী ভবতারিণীর বিশেষ আরতি দক্ষিণেশ্বরের পুজোর বিশেষ আকর্ষণ। ঘট স্নানের পর মায়ের পুরনো ঘটেই নতুন করে গঙ্গার জল ভরে প্রতিষ্ঠা করা হয় কালীপুজোর দিন। দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের দেখানো পথেই পুজো পান। মায়ের ভোগও অতি সাধারণ। ভোগে নিবেদন করা হয় সাদাভাত, ঘি, পাঁচরকমের ভাজা, শুক্তো, তরকারি, পাঁচরকমের মাছের পদ, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। তবে এখানে কারণবারির (মদ) বদলে ডাবের জল দিয়েই মায়ের পুজো হয়।
তারাপীঠ কালী মন্দির- বীরভূমের তারাপীঠ সতীর একান্নপীঠের অন্যতম পীঠস্থান। সারাবছর দেবী মা তারা রুপে পুজো পেলেও কালীপুজোর দিন মা কালী রুপেই পুজিতা হন। অমাবস্যা তিথি মেনে গভীর রাতে নিশিপুজো হয় তারাপীঠে। কালীকে স্নান করিয়ে নতুন বেনারসী ও সোনার গহনায় সাজানো হয়। দুবেলা অন্নভোগ দেওয়া হয় এদিন। বিশেষ ভোগে নিবেদন করা হয় খিচুরি, পোলাও, পাঁচ রকমের ভাজা, তিন রকমের তরকারি, মন্দিরের বলির মাংস, পোড়ানো শোল মাছ, চাটনি, পায়েস ও মিস্টি। সন্ধ্যাবেলায় আরতিতে লুচি ও মিষ্টি নিবেদন করা হয় মা কালীকে।
কালীঘাট কালী মন্দির- কলকাতার প্রাচীন কালীতীর্থ হল কালীঘাট মন্দির। সতীর একান্নপীঠের অন্যতম এই কালীঘাট। বেগুনভাজা, পটলভাজা, কপি, আলু ও কাঁচকলা ভাজা, ঘিয়ের পোলাও, ঘি ডাল, শুক্তো, শাকভাজা, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস ও চালের পায়েস। তবে রাতে মা লক্ষ্মীকে নিরামিষ ভোগ নিবেদন করা হয় কালীঘাটে। লুচি, বেগুনভাজা, আলু ভাজা, দুধ, ছানার সন্দেশ আর রাজভোগ থাকে কালীঘাটের ভোগে।
আরও পড়ুন: Kali Pujo 2021: নিষ্ঠা-সহকারে বাড়িতে কালী পুজো করলে কোন কোন জিনিস অপরিহার্য, জানেন?