পুরাণমতে, কৌশিকী অমাবস্যার শুভতিথিতে পরাক্রমশালী শুভ-নিশুম্ভ অসুর দুই ভাইকে বধ করার সময়েই দেবী পার্বতীর দেহের কোষ থেকে দেবী কৌশিকীর আবির্ভাব হয়েছিল। তাই এই অমাবস্যাকে কৌশিকী অমাবস্যা বলা হয়ে থাকে। আর এদিনেই মা তারার তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সাধক বামাক্ষ্যাপাও। তাই এই সতীপীঠকে সিদ্ধপীঠও বলা হয়ে থাকে। এই পুণ্যতিথিতে উপবাস ও ব্রত পালন করলে ও তপস্যা করলে সিদ্ধিলাভ করা সম্ভব। তবে তারাপীঠ নিয়ে রয়েছে কিছু অজানা তথ্যও। অনেকেই মনে করেন কৌশিকী অমাবস্যার দিনেই তারা মায়ের আবির্ভাব ঘটেছিল। কতটা সত্যি, তারা মায়ের মাহাত্ম্য সম্পর্কেও রয়েচে বিশেষ তথ্য…
কৌশিকী অমাবস্যা নয়, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন অর্থাত্ শুক্লা চতুর্দশীর দিন তারা মায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তারাপীঠের রাজা রামজীবন চৌধুরী। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে ঘটে এই ঘটনা। কথিত আছে, তারাপীঠের মহাশ্মশানে সাধনা করে তারা মায়ের দর্শন পেয়েছিলেন অন্যতম সাধক বশিষ্টদেব। সেইসময় শ্মশানে শিলারূপ ধারণ করেছিলেন তারা মা। এই শিলাময়ী দেবীকে প্রথম পুজো করেন জয়দেব সওদাগড়। তারপর ১৭০১ সালে নবাব মুর্শিদকুলি খানের রাজত্বকালে রাজা রামজীবন শ্মশান থেকে তারা মা-কে নিয়ে তারাপীঠ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেই দিনটি মোটেও কৌশিকী অমাবস্যা ছিল না। ছিল দুর্গাপুজোর পর কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর ঠিক আগের দিন। সেই থেকে ওই দিনটিই তারা মায়ের আবির্ভাব দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে আসছে।
মাহাত্ম্য
কৌশিকী অমাবস্যায় দেবী পার্বতীর কৌশিকী রূপে আবির্ভূতা হওয়ার একটি পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, ব্রহ্মার বরে প্রবল শক্তিশালী ও বলীয়ান দুই অসুর ভাই শুম্ভ-নিকুম্ভ ত্রিভুবনকে অস্থির করে তুলেছিল। স্বর্গের আসন অধিকার লাভেপ আশায় দেবলোককেও ছাড়েনি তারা। পর পর শক্তিশালী দেবতাদের হারিয়ে দিয়ে পরাক্রমশালী হয়ে উঠছিল। দেবতাদের প্রাণ বাঁচাতে ও দেবলোক রক্ষা করতে মহামায়ার শরণাপন্ন হন ইন্দ্র ও মহেশ্বর। মহামায়ার শরণাপন্ন হওয়ার সময মহাদেব সকলের সম্মুখে শিবানীকে কালী বলে সম্বোধন করেন। অপমানে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে মানস সরোবরে কঠোর তপস্যায় বসেন। তপস্যার শেষে পার্বতীর কালো দেহকোষ থেকে ঘনকালো কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেন। সেই দেবীর নাম হয় কৌশিকী। ভাদ্রমাসের এই অমাবস্যা তিথিতে কৌশিকী বলিয়ান শুম্ভ-নিশুম্ভ বধ করে দেবকূলকে রক্ষা করেছিলেন। তবে পুরোটাই ছিল বিধাতার কৌশল। কারণ ব্রহ্মা বর দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ওই দুই অসুরভাইকে কেউ বধ করতে না পারলেও একমাত্র অযোনিজাত নারীই পারবে তাদের হত্যা করচে। তাই দেবী কৌশিকীর আর্বিভূতা হওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কৃষ্ণকোষ ত্যাগ করে গৌরবর্ণ ধারণ করলে মহামায়ার নাম হয় গৌরী।