
হিন্দু ধর্মে অক্ষয় তৃতীয়ার উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিনে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এইদিনকে অক্ষয় তৃতীয়া আখা তীজ নামেও পরিচিত। হিন্দু ধর্মে এই উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এদিন এতটাই শুভ যে কাজে আনন্দ, সাফল্য এবং সমৃদ্ধির কোনও ঘাটতি থাকা উচিত নয়। রীতি ও প্রথা অনুসারে, এ দিনে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই শুভ উপলক্ষে পুজো করলে দেবী লক্ষ্মীর বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। এতে আর্থিক সমস্যা দূর হয়। এই কারণে দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ সবসময় বর্ষিত হয়। হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, এ বছর অক্ষয় তৃতীয়া পালিত হলে আগামী ২২ এপ্রিল। এ দিনে দেবী লক্ষ্মীর পাশাপাশি ভগবান গণেশ, ভগবান বিষ্ণু ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরও পুজো করা হয়। কেন এই উৎসব পালন করা হয়? এর গুরুত্ব কী, অনেকেই জানেন না তা।
বিশ্বাস করা হয় যে অক্ষয় তৃতীয়া ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্মের দিন। দেশের বিভিন্ন স্থানে এই উৎসবটি পরশুরাম জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়। পাশাপাশি এও বলা হয় যে এ দিনে মহাদেবের জটা থেকে গঙ্গা নদী মর্ত্যে আগমন ঘটেছিল। গঙ্গাকে পৃথিবীতে অবতরণ করার জন্য রাজা ভগীরথ বছরের পর বছর তপস্যা করেছিলেন। তাই এ দিনে পবিত্র গঙ্গায় স্নান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই শুভ দিনে দেবী অন্নপূর্ণার পুজো করাও শুভ বলে মনে করা হয়। এমন শুভদিনে দুঃস্থ ও গরিবদের দান ও খাবার বিলি করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়া যদি এই কাজ করা হয়, তাহলে ঘরে কখনও খাবারের অভাব হয় না। শুধু তাই নয়, এ দিন থেকেই মহর্ষি বেদ ব্যাস মহাভারত লেখা শুরু করেছিলেন।
এই দিনে আপনি শ্রীমদ ভাগবত গীতার ১৮তম অধ্যায় পাঠ করতে পারেন। এ দিনে সোনা ও রূপোর মতো জিনিসগুলিতে বিনিয়োগ করা খুব শুভ বলে মনে করা হয়। কথিত আছে, এ দিনে ভগবান কুবেরকে সম্পদের দেবতা বলে মনে করা হয়েছিল। অক্ষয় তৃতীয়া উদযাপনের পিছনে এমন অনেক গল্প রয়েছে।
হিন্দুদের পাশাপাশি জৈন ধর্মেও এই দিনে আখের রস পান করে উপবাস ভাঙার প্রথা রয়েছে। কোনও মানুষ ক্ষুধার্ত ও দরিদ্রদের আখের রস বিলি করা হয়। এমনটা করলে পুণ্য লাভ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।
অক্ষয় তৃতীয়া বাঙালির মনে-প্রাণে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। বাঙালির কাছে এই অক্ষয় তৃতীয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও ধনতেরাসের সঙ্গে অনেতেই ভুল করে ফেলেন। অনেকেরই প্রশ্ন হল অক্ষয় তৃতীয়া আর ধনতেরাস কি একই ব্যাপার? হিন্দু পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের এয়োদশী তিথিতে পালিত হয় ধনতেরাস ৷ ধনতেরাসের শুভ লগ্নে সমৃদ্ধি কামনায় গৃহস্থ বাড়িতে কেনা হয় সোনার মতো মূল্যবান ধাতু ৷ মনে করা হয় যে ধনতেরাসের দিনে মূল্যবান ধাতুর জৌলুসে আকৃষ্ট হয়ে ধনলক্ষ্মী স্বয়ং গৃহস্থের বাড়িতে বসবাসের জন্য প্রবেশ করেন। অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হলেও, ধনী থেকে সাধারণ, সব বাঙালিই মেতে ওঠেন ধনতেরাসের আবহে।