
সনাতন হিন্দুধর্মে দুর্গাপুজো গোটা ভারতজুড়েই পালিত হয়ে থাকে। দেবী দুর্গা বা মহামায়া, যে রূপেই হোক না কেন, দুর্গোত্সব হল বাঙালির সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় একটি উত্সব। বাঙালি সনাতন সমাজে দুর্গাপুজোর মাহাত্ম্য যেমন রয়েছে, তেমনি সামাজিক ও সামাজিক উত্সবের অন্যতম। সাধারণত আশ্বিন ও চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গা পুজো করা হয়ে থাকে। তন্ত্রশাস্ত্র অনুসারে, সব জায়গাই দুর্গার স্থান। সবসময়ই দুর্গা পুজো করার সময়। তবে হিন্দুমতে, বছরে চারটি নবরাত্রি বা দুর্গাপুজো করা হয়ে থাকে। আশ্বিনের দুর্গাপুজোকে শারদীয়া পুজো বলা হয়। বসন্তকালে যে দুর্গাপুজো করাকে বাসন্তীক দুর্গাপুজো নামে পরিচিত।
“যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রূপেণ সংস্থিতা
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ।”
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেবী দুর্গা শক্তিরূপে বিরাজ করে, সর্বজীবে তিনি সংস্থিতা। স্কন্দ পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, দেবী দুর্গা হলেন শক্তির আধার। দুর্গা ও শক্তি পুজোর মধ্যে বিভেদ নেই। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ মতে, ক্রেতাযুগে অযোধ্যার রাজা দশরথের জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীরাম রাবণকে বধ করার পর সীতাকে উদ্ধারের পর দেবীদুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে দেবীর অকালবোধন করেছিলেন। সেই থেকেই শরত্কাল দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন। শরত্কালে এই বিশেষ পুজো করা হয় বলে একে শারদীয়া পুজোও বলা হয়ে থাকে। এই দুই পুরাণেই উল্লেখ রয়েছে, শ্রীরামকে সাহায্য করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গার বোধন ও পুজো করেছিলেন।
কৃত্তিবাসি রামায়ণে উল্লেখ আছে, রাবণ ছিলেন অত্যন্ত শিবভক্ত। যে কোনও বিপদে পার্বতী তাকে রক্ষা করতেন। তাই ব্রহ্মা রামকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, শিবপত্নী পার্বতীকে পুজো করে তুষ্ট করতে। সীতা উদ্ধারের জন্য রাবণ-বধ রামের পক্ষে সহজসাধ্য করতেই সব আয়োজন করেছিলেন। ব্রহ্মার পরামর্শে শ্রীরাম শরৎকালে পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী রূপের বোধন, চণ্ডীপাঠ ও মহাপুজোর আয়োজন করেছিলেন।
আশ্বিন মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন রাম কল্পারম্ভ করেছিলেন। সন্ধ্যেয় বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস করেছিলেন দশরথ পুত্র। মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজার পরেও দুর্গার আবির্ভাব না ঘটায়, রাম মোট ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে মহানবমী পুজোর পরিকল্পনা করেন। ১০৮টি পদ্ম জোগাড় করার জন্য সাহায্য করেছিলেন স্বয়ং হনুমানজি। এদিকে মহামায়া রামকে পরীক্ষা করার জন্য একটি পদ্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন। ১০৮টি পদ্মের মধ্যে একটি পদ্ম না পেয়ে পদ্মের বদলে রামচন্দ্র নিজের একটি চোখ উপড়ে মহামায়ার সামনে নিবেদন করার উদ্যোগ নেন। শ্রীরামের এমন প্রচেষ্টায় দেবী পার্বতী আবির্ভূত হয়ে রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন।