
হিন্দু ধর্মে উৎসব উপলক্ষে উপোস রাখার প্রথা রয়েছে। উৎসবে উপোস রাখাকে হিন্দুধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে উপোস করলে ঈশ্বরের বিশেষ আশীর্বাদ লাভ পাওয়া যায় এবং একজন ব্যক্তি পুণ্য লাভ করেন। উপোস রাখাও রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম, যা মেনে চলা খুবই জরুরি। উপোস রাখার নিয়ম যথাযথভাবে পালন না করলে শুভ ফল পাওয়া যায় না।
সনাতন ধর্মে উপোস রাখার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। উপোস রাখার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মানসিক শান্তি, ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকার শক্তি এবং সুখ ও সমৃদ্ধি লাভ করে। শাস্ত্রে উপোস রাখা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে উপোস করলে সকল প্রকার পাপ ও কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। উপোস করলে মানুষের মন, শরীর ও আত্মা পবিত্র হয়। হিন্দুধর্মে উপোস রাখারর মাধ্যমে ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভক্তি ও উৎসর্গের অনুভূতি পাওয়া যায়। এই কারণে, প্রতিটি ধর্মীয় উপলক্ষ্যে কোনও না কোনও আকারে উপোস রাখার নিয়ম রয়েছে।
উপোস রাখার যতটা ধর্মীয় গুরুত্ব আছে, তার বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব রয়েছে। বিজ্ঞানের মতে, উপোস রাখলে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। উপবাসে খাবার খাওয়া হয় না, সারাদিন কিছু জলখাবার খেয়েই কাটে, যার ফলে ব্যক্তির পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা সবল থাকে। পাশাপাশি শরীরে স্থূলতা ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যার ফলে ব্যক্তির শরীর সুস্থ থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, হিন্দু ধর্মে উপোস রাখা নিয়ে কী-কী নিয়ম রয়েছে।
১) যাঁরা উপোস রাখেন তাঁদের পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা উচিত। যে ব্যক্তি উপবাসের ব্রত গ্রহণ করেন সে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাত্যহিক কাজকর্ম করার সময় স্নান করে তারপর পরিষ্কার কাপড় পরিধান করবে।
২) উপবাসে সংশ্লিষ্ট দেব-দেবীর পূজা করা উচিত। যে নির্দিষ্ট দিনে উপবাস পালন করা হয়, সেই দিন সংশ্লিষ্ট দেব-দেবীর পূজা অবশ্যই করতে হবে।
৩) যে নির্দিষ্ট দিনে আপনি উপবাস রাখার সংকল্প করেছেন, সেই দিন দিনের আলোয় ঘুমানো উচিত নয়।
৪) উপোস রাখার বারবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। উপোস রাখা অবস্থায় খাবার ত্যাগ করে শুধু জল ও ফল খেতে হবে। তবেই এই উপবাস পূর্ণ বলে গণ্য করা হয়।
৫) উপোস রাখার দিনে মিথ্যা এবং ভুল অভ্যাস পরিহার করুন, একজন ব্যক্তির উপবাস রাখা অবস্থায় সর্বদা সত্য কথা বলা উচিত। কাউকে অযথা বিরক্ত করা উচিত নয়। এ ছাড়া উপবাস রাখা অবস্থায় চুরি ইত্যাদি করা উচিত নয়।
৬) উপবাসের শুভ দিনে, অবশ্যই গরীবদের দান করতে হবে এবং সর্বদা অসহায়দের সাহায্য করতে হবে। উপবাসের দিন সারাদিন ভগবানের মন্ত্র জপ করতে হবে।
৭) উপবাসের পরেই সাত্ত্বিক খাদ্য গ্রহণ করুন। এর পাশাপাশি উপবাসের শেষে শুধুমাত্র হালকা খাবার খেতে হবে।