হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, ঈশ্বরের পূজায় ফুলের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পুষ্পর্চন করার সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা অনেকের কাছেই অজানা। শাস্ত্রমতে, ভগবানের চরণে ফুল নিবেদন করলে পুণ্য বৃদ্ধি, পাপের বিনাশ এবং প্রচুর শুভ ফল লাভ হয়। শাস্ত্রে এও বলা হয়েছে যে, ভগবানকে সাজানোর সময় সর্বদা মাথায় ফুল দিয়ে সাজাতে হবে এবং পূজা করার সময় ভগবানের চরণে ফুল অর্পণ করতে হবে। ফুল নিবেদন করলে কোন ফল পাওয়া যায় এবং কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে এবং কোন কোন ফুল দেবতাকে অর্পণ করতে হবে, তা সবিস্তারে জেনে রাখা প্রয়োজন। কারণ যে কোনও ফুল দিয়ে দেব-দেবীর আরাধনা করা উচিত নয়। তাতে ক্ষুব্দ হন দেবতারা।
হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে, ভগবানকে সোনা, রৌপ্য, হীরা ও গহনা নিবেদন করলে তারা যতটা খুশি হয়, ফুল নিবেদন করলে ততটা খুশি হয় না। ফুলের মালা নিবেদন করলে ফুলের তুলনায় দ্বিগুণ ফল পাওয়া যায়। দারিদ্র্য দূর হয় এবং লক্ষ্মী বৃদ্ধি পায়। অনন্ত সৌভাগ্য অর্জিত হয়। পরিবারে শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। সম্পদ বৃদ্ধি পায়। ফুলের সুবাসের মতো মানুষের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মানুষের সহনশীলতা ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। বংশবৃদ্ধি হয়, শত্রুরা কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
গণপতি পুজোর ফুল
– তুলসী ছাড়া সব ফুলই গণপতিজির প্রিয়। দূর্বা ও শমীপত্র গণপতির খুব প্রিয়। তবে দুর্বা অর্পন করার সময় দেখে নিন, সেটি তিন বা পাঁচটি পাতা রয়েছে কিনা।
শিবের পূজায় কোন কোন ফুল অর্পণ করা হয়
– মহাদেবের পুজোয় ফুল নিবেদনের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বেলপত্র ও ধুতরা ফুল ভগবান শঙ্করের খুব প্রিয়। মহাদিদেবের প্রিয় ফুল হল অগস্ত্য, গুলাব পটলা, মৌলসিরি, শঙ্খপুষ্পী, নাগচাঁপা, নাগকেসার, জয়ন্তী, বেলা, জপকুসুম, বন্ধুক, কানের, নির্গুন্ডি, হরসিঙ্গার, আক, মাদার, দ্রোণপুষ্প, নীলকমল, পদ্ম, শমী ফুল ইত্যাদি। ভগবান শিবকে যে ফুল নিবেদন করা হয় তার প্রত্যেকটি গুরুত্ব ও তাত্পর্য রয়েছে। যেমন দূর্বা নিবেদন করলে জীবন লাভ হয় এবং ধুতুরা নিবেদন করলে পুত্র সন্তান লাভ হয়। তবে শিবের পুজোয় কখনও কুণ্ড ও কেতকী ফুল নিবেদন করা হয় না। পুরাণে উল্লেখ রয়েছে, দেবতাদের কষ্ট দূর করার জন্য ভগবান বিষ্ণু প্রতিদিন শিব সহস্রনাম পাঠের মাধ্যমে শিবকে এক হাজার পদ্ম নিবেদন করতেন। একদিন ভগবান শিব তাঁর ভক্তি পরীক্ষা করার জন্য একটি পদ্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন। একটি পদ্ম কম পড়লে ভগবান বিষ্ণু তাঁর একটি পদ্ম-চোখ ভগবান শিবের পায়ে নিবেদন করেন। এই দেখে ভগবান বিষ্ণু খুব খুশি হন এবং অসুরদের বিনাশের জন্য তাঁকে সুদর্শন চক্র দান করেন।।
শ্রীকৃষ্ণের পূজার জন্য ফুল
-মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে তাঁর প্রিয় ফুলের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘কুমুদ, কানের, মল্লিকা, চম্পা, টগর, পলাশের পাতা ও ফুল, দূর্বা, ভৃঙ্গর ও বনমালা আমার খুব প্রিয়’। লক্ষ্মীর বাসস্থান হওয়ায় পদ্মফুল অন্যান্য ফুলের চেয়ে হাজার গুণ বেশি প্রিয় এবং পদ্মের চেয়ে তুলসী হাজার গুণ বেশি প্রিয়।
ভগবান বিষ্ণুর পূজায় ফুল
-রাম তুলসী এবং শ্যামা তুলসী ভগবান বিষ্ণুর খুব প্রিয়। একদিকে যদি তাজা মালতী, চম্পা, কানের, বেলা, পদ্ম ও মণির মালা থাকে এবং অন্যদিকে বাসি তুলসী থাকে তবে ভগবান বিষ্ণু কেবল বাসি তুলসীকেই গ্রহণ করবেন।
– তুলসীর মতই আরও একটি গাছ আছে, ‘দৌনা’, এটি ভগবান বিষ্ণুর খুব প্রিয়। দৌনার মালা প্রভুর এত প্রিয় যে শুকিয়ে গেলেও তিনি তা গ্রহণ করেন।
দেবী পূজার ফুল
গোলাপ, জবাকুসুম, সুগন্ধি সাদা ফুলের মতো সব লাল ফুলই দেবীর প্রিয়। দেবীকে অক ফুল ও দূর্বা নিবেদন করা হয় না। লক্ষ্মী সব ফুলেই বাস করেন কিন্তু তিনি পদ্মকে খুব ভালোবাসেন। লাল গোলাপ, জবা ফুল এবং দূর্বা দিয়ে করা পূজায় সব দেবী শীঘ্রই সন্তুষ্ট হন।
ফুল অর্পণের সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন
– তুলসী পাতা, বেল পাতা ও অগস্ত্যের ফুল কখনও বাসি হয় না। পদ্ম ১১ দিন এবং কুমুদ ৫ দিন বাসি হয় না।
– চম্পার কুঁড়ি ছাড়া অন্য কোনও ফুলের কুঁড়ি ভগবানকে নিবেদন করা উচিত নয়।
– কোনও পাতা, ফুল বা ফল উল্টে ভগবানকে নিবেদন করা উচিত নয়।
– দুপুরের পর ফুল তোলা নিষেধ।
– রবিবার ও দ্বাদশীতে তুলসী গাছ ভাঙা বা পাতা তোলা উচিত নয়।
-মালীর বাড়িতে রাখা ফুলে বাসি দোষ নেই।