
অসহ্য গরম ও প্রখর রৌদ্রের প্রভাবে পুজোর আগে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণের। নিম্নচাপের আশঙ্কায় বুক বাঁধলেও ছোট থেকে বড় সকলেই পুজোর জন্য অপেক্ষায়যেন শেষ হচ্ছে না। সামনেই মহালয়া। আর মহালয়া মানেই ভোরসকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনা। নস্ট্যালজিয়ার পাশাপাশি প্রতিবারই এক অন্য অনুভূতি হয়। বিয়ের মন্ত্রপাঠে মহিলাদের কন্ঠ শোনা গেলেও চণ্ডীপাঠের সময় কেন নারীকণ্ঠ শোনা যায় না?
মহালয়া বা পিতৃপক্ষের পর থেকেই দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যায়। পিতৃপক্ষের অবসানের পরই শক্তির দেবীর আরাধনা শুরু হয়ে যায়। এ দিনে পিতৃপক্ষের শেষ ও দেবী পক্ষের শুরু হয়। এই মহালয়া তিথিতে পূর্বপুরুষের স্মরণে আত্মার শান্তি কামনা করে তর্পণ বা শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে এ দিনে আত্মারা পরিবারের কাছাকাছি আসার জন্য মর্ত্যে নেমে আসেন। পরিবারের সদস্যরা এই সময় তর্পণ বা শ্রাদ্ধ করলে তুষ্ট হয়ে পূর্বপুরুষরা আশীর্বাদ প্রদান করে থাকেন। পূর্বপুরুষদের আত্মা সমাবেশ ঘটলে তাকে মহালয় বলা হয়ে থাকে। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষেরঅন্তিম দিন।
বাজলো তোমার আলোর বেণু,
মাতলো যে ভুবন।
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে
খুলে দিনু মন।…
এই গান শুনতে শুনতেই মহালয়ার সূর্য উদয় হয়।
ইয়া দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমস্তসৈ নমো নমঃ।।
এই শ্লোকের মাধ্যমেই শক্তির দেবীকে আহ্বান জানানো হয়। শাক্তধর্মে শ্রী শ্রীচণ্ডীর পাঠ দুর্গাপুজোর অন্যতম ও অপরিহার্য অঙ্গ বলে মনে করা হয়। শ্রীশ্রী চণ্ডীকে দেবীমাহাত্ম্যমও বলা হয়ে থাকে। এটি আসলে মার্কণ্ডেয় পুরাণেও এই অংশের উল্লেখ রয়েছে। এতে রয়েছে তেরোটি অধ্যায়ে মোট সাতাশটি শ্লোক। এখানেই রয়েছে দুর্গাকে নিয়ে তিনটি পৌরাণিক কাহিনি ও দুর্গাপুজো নিয়ে অন্য কাহিনি। প্রতিটি কাহিনির মূল চরিত্র হল দেবী দুর্গা। তবে সব কাহিনির মধ্যে মহিষাসুর বধের কাহিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
১৯৭৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোরে প্রথম মহিষাসুরমর্দিনী নামে এক অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয়। সেখানে প্রথম মহানায়ক উত্তমকুমার ভাষ্যপাঠক ছিলেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠে সেই ম্যাজিক অনুভূতি লাভ করেননি সাধারণ শ্রোতা। শেষমেষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের এভারগ্রিন ম্যাজিকেই ডুব দেন বাঙালি। তাঁর কণ্ঠকেই আপন করে নেন আপামর বাঙালি। তাই সেই থেকেই তাঁর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ শোনাকে অমৃত শ্রবণ বলে মনে করা হয়। কিন্তু মহিলারা যে এই চণ্ডীপাঠ করতে পারবেন না বা মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ, তা কোথাও উল্লেখ নেই। তাই চাইলেই মহিলারা চণ্ডীপাঠ করতে পারেন।