সারাবছর উত্সব যেন লেগেই রয়েছে। তবে বাঙালি এই ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে। সন্তান,স্বামী, জামাই,ভাই-বোন-সহ গোটা পরিবারকে নিয়েই পার্বণ পালন করার ব্যাপারে বিশ্বাসী। নববর্ষের দিন থেকে চৈত্র সংক্রান্তি, বারো মাসে তেরো পার্বন পালন করে থাকেন বাঙালিরা। বৈশাখ শেষে জ্যৈষ্ঠ মাসেই স্পেশাল ষষ্ঠী পালন করা হয়। প্রত্যেক মা জামাইষষ্ঠীর ব্রত পালন করে থাকেন। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসের শুরুতে বাঙালির ঘরে ঘরে এই স্পেশাল উত্সব পালন করে থাকেন অধিকাংশ মহিলারা। জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইকে ঘিরে শাশুরিদের এই অনুষ্ঠান এখন সত্যিই উত্সবে পরিণত হয়েছে। সাধারণত পঞ্চাঙ্গ অনুসারে, জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়।
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এ বছর জামাইষষ্ঠী পালিত হবে ১০ বৈশাখ, ১৪৩০ অর্থাত্ ২৫ মে, বৃহস্পতিবার। তিথি অনুযায়ী ষষ্ঠী পড়ছে রাত ৩টে থেকে। শেষ হবে ১১ বৈশাখ, ২৬ মে , শুক্রবার। ভোর ৫টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত থাকবে এই ষষ্ঠীর তি্থি।
সাধারণত, গ্রামবাংলায় কন্যার বিবাহের পর জামাই ও শাশুড়ির সম্পর্ক মজবুত করতে এই জামাইষষ্ঠী পালন করা হয়। সেই উদ্দেশ্যেই ওই দিন মেয়ে ও জামাইকে একসঙ্গে নেমন্তন্ন করা হয়। ডাকা হয় আত্মীয়স্বজনদেরও। পরিবারের সকলে মিলে এই সামাজিক উত্সব পালন করা হয়ে থাকে। সন্তানের মঙ্গলকামনায় অতিপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলার মায়েরা দেবী ষষ্ঠীকে তুষ্ট করতে উপবাস ও ব্রত পালন করে থাকেন। তবে লোককথা অনুযায়ী এই জামাইষষ্ঠী পালন করা হত একটি উদ্দেশ্যে। আগেকার দিনে, বিবাহের পর সন্তান না হওয়া পর্যন্ত বাপের বাড়িতে যেতে পারতেন না মেয়েরা। কিন্তু মায়ের মন মেয়ের জন্য কেঁদে ওঠলেও উপায় থাকত না। অন্যদিকে সন্তানধারণের সমস্যা থাকলে বাবা-মাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হত। বিবাহিত মেয়ের মুখ দেখার জন্য জ্যৈষ্ঠমাসের শুক্লপক্ষ তিথিতে জামাইষষ্ঠীর আয়োজন করা হয়। ওই দিন মেয়ে-জামাইকে নেমন্তন্ন করে খুব খাতির-যত্ন করা হত। আম-দুধ-লিচু-কলা ও হরেক রকম সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে জামাইকে সন্তুষ্ট করা হত। সেই সঙ্গে কন্যা যাতে দ্রুত গর্ভবতী হয়, তার জন্য ষষ্ঠীর পুজো দেওয়া হত। আর সেই সংস্কার এখনও বিদ্যমান। তবে কন্যার প্রসূতি হওয়ার বদলে বর্তমানে জামাই আদরে এসেছে অন্য চমক।