বারাণসী মানেই বাবার থান। প্রতিটি হিন্দু চান জীবনে একবার অন্তত বাবা মহাদেবের নিজের বানানো শহর কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করবে। তাই কাশীতে বিশ্বনাথের দর্শন করতে প্রতি বছরই প্রচুর ভক্ত ভিড় করেন। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী হল একটি অতি প্রাচীন শহর। হিন্দুদের বিশ্বাস করেন, এই ঐতিহ্যবাহী শহর ভোলেনাথ স্বয়ং নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভারতের মধ্যেই ভারত। তা সে বেনারস হোক বা কাশী, নিজ নিজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। বারাণসীর গঙ্গাতীর বরাবর রয়েছে প্রচুর মন্দির ও বিখ্যাত ঘাট। সেই তালিকায় রয়েছে কাল ভৈরব মন্দিরও।আর সেই সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হিন্দুদের বিশ্বাস ও পৌরাণিক কাহিনি। কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করতে গেলে এই তথ্য অবশ্যই জেনে রাখা ভাল। কারণ কাল ভৈরবের দর্শন ছাড়া ভোলেনাথ দর্শন অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়।
কাশীর প্রধান ‘কোতোয়াল’
কাশী বিশ্বনাথ, বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম। পৌরাণিক কাহিনি মতে, কাশী বিশ্বনাথ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কাশীর কাল ভৈরবের মন্দিরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, কাল ভৈরবের মন্দিরে অধিষ্ঠিত রয়েছেন শিবের ভয়ঙ্কর রূপের এক মূর্তি। এই মন্দিরের প্রধান দেবতা, ভগবান কাল ভৈরব, ভগবান শিবের ভয়ঙ্কর প্রকাশ বলে বিশ্বাস করা হয়। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ভগবান ব্রহ্মা ও ভগবান বিষ্ণুর মধ্যে আধিপত্য নিয়ে এক মহাজাগতিক তর্ক শুরু হয়েছিল। কে স্বর্গের সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা, তাই নিয়ে ভয়ঙ্কর এক লড়াই শুরু হয়েছিলে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে। এক বিশাল অগ্নি স্তম্ভ আবির্ভূত হয়েছিল সেই সময়। ভগবান শিব এই স্তম্ভ থেকে কাল ভৈরব রূপে আবির্ভূত হন। সেই স্তম্ভের শুরু ও শেষ কোথায়, তা খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হলে কোনও দেবতাই তা খুঁজতে সফল হননি। এরপর ধ্বংসকারী ভগবান শিব কালভৈরব নামে পরিচিত এক ভয়ানক সত্তার রূপে আবির্ভূত হন। আর এই স্তম্ভ শিবের প্রকাশ ছাড়া যে আর কিছুই ছিল না, তা বলাই বাহুল্য।
কাল ভৈরব হল শক্তির আধার। অনেকে আবার কালভৈরবকে “ক্ষেত্রপাল”, পবিত্র ভূমির অভিভাবক দেবতা বলেও মনে করে থাকেন। শিবের জ্বলন্ত প্রচণ্ড রূপকেই কাল ভৈরব হিসেবে উৎসর্গ করা হয়েছে। কাল মানে মৃত্যু ও সময়। আর এই কালভৈরবকে দর্শন করতে প্রচুর ভক্তরা ভিড় করে থাকেন। বিশেষ করে রবিবার ও মঙ্গলবার এই মন্দিরে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। বিশেষ আচার-রীতি মেনে পুজো করলে সব বাধা-বিপত্তি, ক্লেশ ও দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করে বলে মনে করে থাকে। এছাড়া সব কাজেই সাফল্য অর্জন করা যায় বলে বিশ্বাস। এছাড়া কালভৈরবকে কাশীর কোতোয়াল বা অভিভাবক বলে মনে করা হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস, প্রাচীন শহর বারাণসী ও শহরবাসীদের রক্ষাও করেন।