বিশ্বকর্মা পুজো মানেই বাঙালির পুজোর মরসুম শুরু হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন। দেবীপক্ষের আগে শেষ পুজো হিসেবে বিশ্বকর্মা ও রান্না পুজো পালিত হয়। তারপর মহালয়ার পর শুরু হয় শারদীয় দুর্গাপুজোর শুভারম্ভ। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন যেমন রান্নাপুজোর পান্তা ভাত ও ভাজাভুজি, ডাল, মাছ খাওয়ার রীতি রয়েছে, তেমনি আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোরও প্রথা রয়েছে। গ্রাম বাংলা কেন, শহরেও এদিন বিভিন্ন জায়গাতে ঘুড়ি ওড়ানোর একটি চল রয়েছে। বিশ্বকর্মার দিন সাধারণত বিভিন্ন কল-কারখানা, গাড়ি, যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসে বিশ্বকর্মা পুজো পালন করা হয়। তবে এদিন আকাশে রঙবেরঙের ঘুড়ি ওড়ানোরও পার্বণ পালন করা হয়। চারিপাশ থেকে ভোকাট্টা, ভোকাট্টা আওয়াজে চারিদিক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় মকর সংক্রান্তির দিন ঘুড়ির উত্সব পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলায় বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কেন ঘুড়ি ওড়ানো হয়, তা জানেন?
বিশ্বকর্মার দিন কেন দলবেঁধে আকাশে ঘুড়ির লড়াই করা হয়, সেই প্রশ্ন অনেকের মনেই জেগে থাকে। কেন এই বিশেষ দিনে ঘুড়ি ওড়ানো হয়, ভোকাট্টা কথার অর্থ কী., তা জানা আছে? পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা বহু যুগ ধরে চলে আসছে। কথিত আছে, বিশ্বকর্মা হলেন কারিগরের দেবতা, হিন্দু দেব-দেবীদের মস্ত অস্ত্র, প্রাসাদ থেকে শুরু করে দেবতাদের রথ সব তৈরি করেছিলেন এই দেবতা। স্থাপত্য ও যন্ত্রবিজ্ঞান বিদ্য়ার প্রধান ও জনক ছিলেন বিশ্বকর্মা, উল্লেখ রয়েছে ঋগবেদেও। পুরাণ মতে, শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা নগর তৈরির পিছনে ছিল বিশ্বকর্মার কীর্তি। শুধু নগর তৈরিতেই নয়, দেবতাদের পুষ্পক রথ, উড়ন্ত রথও তৈরি করেছিলেন। এই উড়ন্ত রথের স্মরণেই এদিন ঘুড়ি ওড়ানোর রীতি রয়েছে। তাই বাংলার আকাশে রঙবেরঙের ঘুড়ি ওড়ানো হয়। সারাদিন ধরে চলে ঘুড়ির লড়াই আর ভোকাট্টা বলে উচ্ছ্বাস।
তবে ঘুড়ি ওড়ানোর রয়েছে বাংলার নানা ইতিহাস। লৌকিক প্রথা মেনে ঘুড়ি ওড়ানো হলেও কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্ন শহরে প্রতিপত্তি ও আর্থিক শক্তি প্রদর্শনেরর জন্য ঘুড়িতে টাকা বেঁধে আকাশে বড় বড় ঘুড়ি ওড়ানো হত। ধনীব্যক্তিদের কাছে এটি বিশেষ বিনোদনের হয়ে ওঠে। জমিদার থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা এই বিনোদনের সঙ্গে জড়িতে ছিলেন। সবচেয়ে বেশি এই ঘুড়ি ওড়ানো হত বর্ধমানের রাজবাড়িতে। সেই থেকে সেই এলাকায় বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি উত্সব হিসেবে পালিত হয় আজও।