বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ — এ কথা বহুল প্রচলিত। শহুরে উৎসবের চাকচিক্যর মাঝেও হারিয়ে যায়নি গ্রামের নিজস্বতা। ইতু পুজো তার অন্যতম উজ্জ্বল উদাহরণ। কার্তিক সংক্রান্তিতে সূচনা হয় এই পুজোর। আর সমাপ্তি ঘটে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তিতে। টানা ৩০ দিনের প্রতিটি রবিবারই মন্ত্র পড়ে ও পুজো করে ইতুর সরাতে জল ঢালতে হয়। এই পুজোয় সেভাবে কোনও পুরোহিত লাগে না। বাঙালিদের ঘরে ঘরে মেয়েরাই এই পুজোতে নিজেরা মন্ত্র পড়েন। ভক্তিভরে পুজো করেন। মনোবাসনা কামনা করেন। ইতু পুজোর নিজস্ব মন্ত্র রয়েছে। করতে হয় ব্রত পাঠ। বাড়িতে ইতু পুজো তো করছেন, এই মন্ত্রই পড়ছেন কিনা, দেখে নিন। না হলে কিন্তু পুজো করাই হবে বৃথা। আজ, রবিবার ১৫ ডিসেম্বর। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে আজ ইতু পুজো করার দিন রয়েছে।
প্রায় প্রতি বাঙালির ঘরে ঘরে ইতুকে মাতৃদেবী হিসেবে পুজো করা হয়। ইতু পুজোর জন্য একটি ঘটের প্রয়োজন। সেটির গায়ে পুতুল আঁকতে হয়। সরায় মাটি দিয়ে তাতে শাক ও শস্যদানা ছড়িয়ে একটি প্রতীকী শস্যভূমি তৈরি করা হয়। ইতু প্রতিষ্ঠা করার সময় এবং প্রতি রবিবার তাতে জল দেওয়ার সময় একটি মন্ত্র পাঠ করতে হয়। আর সেই মন্ত্র না পড়লে ইতু পুজো সম্পূর্ণ হয় না।
আর্থিক উন্নতি, সংসারের শ্রীবৃদ্ধি লাভ ও মনোবাসনা পূরণের জন্য অনেকেই ইতু পুজো করেন। সকালে স্নান করে, শুদ্ধ কাপড় পরে বাড়ির মন্দির বা তুলসী মঞ্চের সামনে বসে একচিত্তে নিম্নে উল্লিখিত মন্ত্র পাঠ করুন। উল্লেখ্য, এই ব্রতর দিন আটার কোনও খাবার খাবেনা। পোড়া খাবার খাবেন না। নিরামিষ আহার করতে হয়।
রইল ইতু পুজোর মন্ত্র- “ইঁয়তি ইঁয়তি নারায়ণ, তুমি ইঁয়তি ব্রাহ্মণ। তোমার শিরে ঢালি জল, অন্তিম কালে দিও ফল।”
উপরিল্লিখিত মন্ত্রটি ছাড়াও ইতু পুজোর সময় যে মন্ত্রোচ্চারণ করতে হয় সেটি হল —
অষ্ট চাল অষ্ট দূর্বা কলস পাত্রে ধুয়ে
শুনো একমনে ইতুর কথা সবে প্রাণ ভরে
ইতু দেন বর
ধন-ধান্যে, পুত্র-পৌত্রে বাড়ুক তাদের ঘর
কাঠি-কুটি কুড়োতে গেলাম
ইতুর কথা শুনে এলাম
এ কথা শুনলে কী হয়
নির্ধনের ধন হয়
অপুত্রের পুত্র হয়
অশরণের শরণ হয়
অন্ধের চক্ষু হয়
আইবুড়োর বিয়ে হয়
অন্তিম কালে স্বর্গে যায়।।