
ভাই-বোনের পবিত্র সম্পর্কের প্রতীক যেমন ভাইফোঁটা, তেমনই রাখি বন্ধন উৎসব। কেবল ভাইবোন নয়, সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতেও তো এই রাখিকেই হাতিয়ার করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দিনটা ছিল ৩০ আশ্বিন, কলকাতার রাস্তায় রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ইংরেজদের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জাতিধর্ম নির্বিশেষে চলে রাখি পরানো। কিন্তু হঠাৎ রাখি পরানোর কথাই ভাবলেন কেন রবীন্দ্রনাথ? এই প্রথা চালু হল কী করে?
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় আলেকজান্ডার যখন বিশ্বজয়ের স্বপ্ন নিয়ে ভারতে পা রেখেছিল তখন তার সামনে পরে পুরু রাজ্য। সেদিন আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করেনি পুরু রাজা। ফলত যা হওয়ার তাই হল। পুরু রাজ্য আক্রমণ করে আলেকজান্ডারের সেনা। কিন্তু সেই বিশাল পরাক্রমী আলেকজান্ডারের জয়ের চাকা এসে থেমে যায় পুরু রাজের সামনে। যুদ্ধে পরাজিত হন আলেকজান্ডার। তাঁকে বন্দি করে পুরুরাজ। সেদিন নাকি স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে পুরুরাজের হাতে রাখি পরিয়ে ভাই পাতিয়েছিলেন আলেকজান্ডারের স্ত্রী। অর্থাৎ সেই সময়েও ভারতে প্রচলিত ছিল রাখি বন্ধন উৎসব।
রাখি নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা পৌরাণিক কাহিনিও। রামায়ণ অনুসারে, রাম সমগ্র বানর সেনাকে ফুল দিয়ে হাতে রাখি বেঁধে দিয়েছিলেন। দেবী লক্ষ্মী নাকি ভচাই হিসেবে রাখি পরিয়েছিলেন বলির হাতে। তারপর উপহার স্বরূপ স্বামী বিষ্ণুকে স্বর্গে ফিরে যেতে বলতে বলেন।
আপন বোন না হয়েও শ্রীকৃষ্ণের কাছে অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন দ্রৌপদী। এদিকে দ্রৌপদীর প্রতি এত স্নেহ দেখে কিছুটা অভিমান ভরে কৃষ্ণকে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন নিজের বোন সুভদ্রা। উত্তরে কৃষ্ণ জানান, ‘যথা সময়ে এর কারণ তুমি বুঝতে পারবে’। এর কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত ঝরছিল, তা দেখে সুভদ্রা রক্ত বন্ধ করার জন্য কাপড় খুঁজছিলেন, কিন্তু কোথাও কোনও পাতলা সাধারণ কাপড় পাচ্ছিলেন না। এর মাঝে দ্রৌপদী সেখানে এসে দেখেন কৃষ্ণের হাত থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। সেই ঘটনা দেখামাত্রই বিন্দুমাত্র দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাত বেঁধে দেন, কিছুক্ষণ পর রক্তপাত বন্ধ হয়। তখন শ্রীকৃষ্ণ বোন সুভদ্রাকে ডেকে বলেন-‘এখন বুঝতে পেরেছ কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি?’