
বাড়িতে সাধারণ নারায়ণ পুজো হোক বা দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো থেকে অন্য কোনও পুজো, সবেতেই একটি জিনিস মাস্ট। সেটি হল নবমীতে হোম। যে কোনও পুজোর শেষে এই একটা আচার পালন করতেই হয়। হিন্দু শাস্ত্রমতে হোম না হলে পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এমনিতে হোম বা পুজোর পদ্ধতি প্রায় সব পুজোয় একই। সেই প্রাচীনকাল থেকেই মুনি-ঋষিদের মধ্যে এই হোমের প্রথার প্রচলন রয়েছে। বিশ্বাস হোম করলে তবেই সম্পন্ন হয় পুজো। এতে আশেপাশের পরিবেশ শুদ্ধ থাকে। চারিপাশে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার ঘটে। হোমের ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক উভয় পদ্ধতি বিশেষ। বাড়িতে যদি নিয়মিত হোম হয় তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস।
আপনি জানেন কি, পুজোর পর হোম করা কেন প্রয়োজন?
হোমের প্রথা বহু শতাব্দী প্রাচীন। রামায়ণ-মহাভারতেও হোমের উল্লেখ রয়েছে। আসলে আগুনের যাহায্যে ইশ্বরের উপাসনা করাকেই বলা হয় হোম। কথিত, হোম করলে বাড়ির সব ঝামেলা থেকে দূরে থাকা যায়। জীবনে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার ঘটে। সংসারে সুখ-সমৃদ্ধি আসে।
হিন্দুধর্মে হোম ছাড়া কোনও পুজো সম্পূর্ণ নয়। অশুভ আত্মার প্রভাব, গ্রহদোষ, গৃহশান্তির জন্যও হোম করতে পারেন। ভূমি পুজো বা বিবাহেও তাই হোম গুরুত্বপূর্ণ। এই হোমের মাধ্যমে ইশ্বরের সঙ্গে সঙ্গে আরাধনা করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
পুজোর শেষে কেন হোম করা হয় তা বুঝতে গেলে ফিরে তাকাতে হয় ইতিহাসের দিকে। আসলে এই যজ্ঞ, যা চলতি কথায় আমাদের কাছে হোম বলে পরিচিত, তা এসেছে আর্যদের থেকে। পুজো হয় মূলত তিনটি পদ্ধতিতে।
উপাচার পুজো – অর্থাৎ যে পুজোয় বস্ত্র, ভোগ, মন্ত্রোচ্চারণ ইত্যাদি নানা উপাচার মেনে পুজো করা হয়।
মানসোপোচার পুজো – এই পুজো হয় মনের অন্দরের ভক্তিশ্রদ্ধার মাধ্যমে। এতে কোনও মন্ত্রোচ্চারণ হয় না।
যজ্ঞ বা হোম – যজ্ঞ হল আগুনের মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনা। অর্থাৎ, আগুনের মাধ্যমে পুনরায় আরাধনা করা হয় দেবীর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্যদের প্রভাবই এই দেশের পুজোতেও এই প্রথার শুরু। প্রাচীনকালে পুজো হত উপাচার মেনেই। এরপর এদেশে আসে আর্যরা। অনার্যদের সঙ্গে আবদ্ধ হয় বিবাহবন্ধনে। দুই গোষ্ঠীর মিলনে গঠিত হয় নতুন সভ্যতার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ধর্মীয় সংস্কৃতিতে আর্যদের বিশেষ প্রভাব লক্ষণীয়। তাঁদের মধ্যে মূর্তি পুজোর কোনও রীতি প্রচলিত ছিল না। বরং এই অগ্নিদেবের মধ্যে দিয়ে করতেন ঈশ্বর উপাসনা। ভবিষ্যতে এই দুই প্রথা মেনেই শুরু হয় পুজোর শেষে হোমের প্রচলন। উপাচার পুজো সেরে শেষে হয় হোম। এও পুনরায় দেবীর আরাধনার অঙ্গ।