
যে কোনও হিন্দুধর্মাবলম্বীর ইচ্ছে থাকে, মৃত্যুর আগে অন্তত একবার কেদারনাথ মন্দির দর্শনের। ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম জ্যোতির্লিঙ্গ কেদারনাথ। হিমালয়ের কোলে স্থাপিত কেদারনাথ ধাম। ছয় মাস পরে সেই ধামে যাওয়ার রাস্তা খুলেছে ফের। এমতাবস্থায়, ভক্তগণ বাবা ভোলেনাথের দর্শনের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছেন। আপনিও কি কেদারনাথ ধামে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? তাহলে যাত্রা শুরুর আগে কেদারনাথ ধামের ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে একটু জেনে নিন।
- পুরাণ অনুসারে, একবার শ্রীবিষ্ণু নর এবং নারায়ণ— এই দুই ভাই রূপে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন ও মহাদেবের পূজায় মগ্ন হন। দুই ভাইয়ের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব আবির্ভূত হন ও তাদের বর দিতে চান। সেইসময় দুই ভাই মহাদেবকে হিমালয়ের কোলে সর্বদা অধিষ্ঠান করার অনুরোধ করেন। মহাদেব তারপর কেদারক্ষেত্রে জ্যোতির্লিঙ্গরূপে আবির্ভূত হন।
- আবার শিব পুরাণ অনুসারে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়লাভের পর পঞ্চপাণ্ডব অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পড়েন। ভ্রাতার হাতে ভ্রাতার হত্যা তাদের মন ব্যথাতুর করে তুলেছিল। ঋষি বেদব্যাস তাঁদের পরামর্শ দেন দেবাধিদেব মহাদেবের দর্শন করে তাঁর কাছ থেকে পাপমুক্ত হওয়ার বর লাভ করার। পাণ্ডবরা তাই মহাদেবের দর্শনের উদ্দেশ্যে কেদারনাথে পৌঁছান। এদিকে মহাদেব সেইসময় পঞ্চপাণ্ডবের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন ও তাদের দেখা দেবেন না বলে একটি মহিষের রূপ ধারণ করেন। এদিকে পঞ্চপাণ্ডব কেদারে পৌঁছানোর পর সকল মহিষ পাণ্ডবদের অভিবাদন করেন ও পা ধুয়ে দেন। শুধু একটি মহিষ তা করতে অস্বীকৃত হয়। ভীমের সন্দেহ হয় ও তিনি বুঝতে পারেন মহাদেব ছদ্মবেশে তাদের সঙ্গে লীলা করছেন। ভীম সঙ্গে সঙ্গে ওই মহিষকে ধরতে যান। মহিষটি মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে দেখে ভীম মহিষকে জাপটে ধরেন। তাতেই পাঁচ খণ্ডে মহিষ ছড়িয়ে পড়ে হিমালয়ের নানা কোণে। মহিষমূর্তি ছেড়ে আবির্ভূত হন মহাদেব।
- পাণ্ডবদের আকুলতা দেখে তাদের পাপ থেকে মুক্ত করার বর দেন। পাণ্ডবরা এরপর ওই জায়গায় মন্দির স্থাপন করেন। দীর্ঘদিন পুরু তুষারের নীচে চাপা পড়ে থাকা মন্দিরকে আদি শঙ্করাচার্য পুনর্নির্মাণ করেন। কেদারনাথ মন্দিরে বাব কেদারনাথের শিবলিঙ্গ ছাড়াও রয়েছে একাধিক দেবদেবীর মূর্তি। মন্দিরের ভিতরে ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যায় মাতা পার্বতী, নন্দী, পঞ্চপাণ্ডব এবং দ্রোপদীর মূর্তি।
- ২০১৩ সালে মেঘভাঙা জল ও বন্যায় যে বড় প্রস্তরখণ্ড ভেসে এসে মন্দিরের সামনে থমকে গিয়েছিল তা এখনও সেখানেই আছে। ওই প্রস্তরখণ্ডেই জলের তোড় প্রতিহত হয়েছিল। নিরাপদ ছিল মন্দির। বর্তমানে ওই প্রস্তরখণ্ডকে দেবশিলা হিসেবে পূজা করা হয়।
- প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে মহিষের দেহের পিছনের অংশ পড়েছিল কেদারনাথে। সামনের অংশ পড়েছিল পশুপতিনাথে যা এখন নেপালে অবস্থিত।
- ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে দু’টি হল কেদারনাথ ধাম এবং রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ। দু’টি মন্দিরই একই সরলরেখায় স্থাপিত।
- কেদারনাথ মন্দির ৬ মাসের জন্য খোলা থাকে। ৬ মাস থাকে বন্ধ। দীপাবলির পরে মন্দিরে আসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফের গ্রীষ্মকালে মন্দির খুলে যায়। বাকি ছয়মাস মন্দিরে একটি দীপ জ্বলে অবিরত।