এক পক্ষকালের অর্থ হল ১৫ দিন। পিতৃপক্ষও (Pitru Paksha)একপক্ষকাল। পক্ষ দু’টি। শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ। অমাবস্যা থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পরে আসে পূর্ণিমা। অমাবস্যা থেকে পরবর্তী পূর্ণিমাকে বলে শুক্লপক্ষ (Shukla Paksha)। অন্যদিকে পূর্ণিমা থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পরে আসে অমাবস্যা (Amavasya)। এই ১৫ দিনকে বলে কৃষ্ণপক্ষ। অর্থাৎ মাসে দু’টি পক্ষ। এই হিসেবে একবছরে বা ১২ মাসে পক্ষের সংখ্যা হল ২৪। মনে করা হয় এই ২৪টি পক্ষের মধ্যে দু’টি পক্ষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একটি পিতৃপক্ষ এবং অন্যটি দেবীপক্ষ (Devi Paksha)। পিতৃপক্ষ শোক জ্ঞাপন করার সময়। শাস্ত্র অনুসারে পিতৃপক্ষ অতীব অশুভ। এই সময় কোনওরকম শুভ কাজ করা উচিত নয়। বিয়ে, পৈতে, উপনয়নের আয়োজন, এমনকী অলঙ্কার, গৃহ, বাহনাদি ক্রয় করার মতো শুভ কাজ এই সময় করা যায় না।
হিন্দু ধর্ম অনুসারে পিতৃপক্ষ পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার সময়। পঞ্চাঙ্গ অনুসারে ভাদ্রমাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে এই পক্ষ শুরু হচ্ছে ও শেষ হচ্ছে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে। পিতৃপক্ষের শেষ দিনটিকে সর্বপিতৃ অমাবস্যা বা মহালয়া অমাবস্যাও বলা হয়। শাস্ত্র অনুসারে এই দিনটি পিতৃপক্ষের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিন।
হিন্দুধর্মে এই দিনটি শ্রাদ্ধ ও শোকপালনের দিবস। বিবিধ পূজা, অর্চনা, উপচার, এবং দানের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করতে হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে পিতৃপক্ষে পরলোকগত পূর্বপুরুষের প্রতি জল অর্পণ করলে তাঁরা মুক্তি পান।
সাধারণত কোনও ব্যক্তির প্রয়াণের পর তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান পরিচালিত হয় ওই ব্যক্তির জ্যেষ্ঠ সন্তান বা কোনও পুরুষ আত্মীয় দ্বারা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরাও শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে পারেন। মনে করা হয়, এই দিনে সঠিক নিয়ম মেনে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে পারলে, পরলোকগত আত্মা মর্তে নেমে এসে তাঁর প্রিয় উত্তরপুরুষকে আশীর্বাদ করেন।
এই দিনে পিণ্ডদানও করা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই তাঁর পূর্বপুরুষের কাছে পিতৃঋণ থাকে। এই ঋণ মেটাতে হয় পিণ্ডদানের মাধ্যমে। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের একটি অঙ্গ হল দানধর্ম পালন। বিশ্বাস করা হয়, সঠিক নিয়ম মেনে পিণ্ডদান করা হলে গতায়ু পূর্বপুরুষের জন্য বন্ধ স্বর্গের দ্বার খুলে যায়।
শ্রাদ্ধের নিয়ম
পরিবারের সবচাইতে জেষ্ঠ্য পুত্র বা সবচাইতে বেশি বয়সি পুরুষ, পবিত্র গঙ্গায় স্নান করেন ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করেন। এরপর কুশ ঘাস দিয়ে তৈরি একটি আংটি পরেন আঙুলে। কুশ ঘাসের আংটি উদারতার প্রতীক। এছাড়া এই আংটি পূর্বপুরুষকে আহ্বান করে। এরপর একটি জলচৌকি নিয়ে তার উপর বিছানো হয় সাদা কাপড়ে। দক্ষিণ দিকে এই চৌকি রেখে তার উপর রাখা হল কালো তিল, বার্লি। এরপর ওই চৌকিতে রাখা হয় পূর্বপুরুষের ফোটো। এরপর পূর্বপুরুষকে আহ্বান করা হয় ও তাঁর উদ্দেশ্যে চাল, মধু, ছাগলের দুধ, চিনি এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বার্লি দিয়ে প্রস্তুত মণ্ডকে পিণ্ড হিসেবে দান করা হয়।
পিণ্ডদানের পর হয় তর্পণ। এক্ষেত্রে জলের সঙ্গে ময়দা, বার্লি, কুশ, কালো তিল মিশিয়ে পরলোকগত পূর্বপুরুষকে অর্পণ করা হয়।
পিণ্ডদান এবং তর্পণ শেষ হলে দুঃস্থ ব্যক্তিদের খাদ্য এবং বস্ত্র দান করতে হয়।