
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, সব হিন্দু মন্দিরে দেব-দেবীদের পুজো করার পর ভক্তদের প্রসাদ হিসেবে চরণামৃত ও পঞ্চামৃত বিলি করা হয়। অনেকে ভাবেন এই দুটি জিনিস একই। কিন্তু উভয়ের মধ্যেই রয়েছে বিস্তর ফারাক। আয়ুর্বেদ অনুসারে, চরণামৃত ও পঞ্চামৃত স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। সনাতন ধর্মে চরণামৃত ও পঞ্চামৃত উপাসনা পাঠের সমান গুরুত্ব রয়েছে। পুজোর সময় প্রসাদ হিসেবে চরণামৃত ও পঞ্চামৃত গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। অধিকাংশ মন্দিরের পুরোহিতরা মন্দিরে আসা ভক্তদের প্রসাদ হিসাবে পঞ্চামৃত ও চরণামৃত দিয়ে থাকেন। তবে অনেক কম মানুষই জানেন যে চরণামৃত ও পঞ্চামৃত, উভয়ই আলাদা। উভয়ের তৈরির পদ্ধতি ভিন্ন ও উভয়েরই ভিন্ন ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। কী সেই পার্থক্য, তা নিজেই জেনে নিন…
পঞ্চামৃত ও চরণামৃতের মধ্যে পার্থক্য
পঞ্চামৃত ও চরণামৃত উভয়ই আলাদা আলাদা প্রসাদ। কিন্তু ভগবানের পুজোয় প্রসাদ হিসেবে উভয়ই ব্যবহার করা হয়। । পঞ্চামৃত তৈরি করা সময় মোট পাঁচটি জিনিস মেশানো হয়। যজ্ঞ, বিশেষ পুজোয় ঈশ্বরের পবিত্রতার জন্য প্রস্তুত করা হয় এই তরল সুস্বাদু পানীয়। পঞ্চামৃতে যে পাঁচটি জিনিস মেশানো হয় তা হল গরুর দুধ, দই, ঘি, গঙ্গাজল ও চিনি। এই সব মিশিয়ে, ঈশ্বরের অভিষেক ও ভোগের জন্য পঞ্চামৃত প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু চরণামৃত তৈরি হয় শুধুমাত্র জলে তুলসী মিশিয়ে।
পঞ্চামৃত কী
পঞ্চামৃত নাম থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, এই প্রসাদের মধ্য পাঁচ জিনিস মেশানো হয়। এই অমৃত প্রসাদ তৈরি করতে পাঁচটি অমৃতের মতো জিনিস একসঙ্গে মেশানো হয়। ঈশ্বরের অভিষেক করার জন্য ব্যবহার করা হয় পবিত্র এই জিনিসগুলি। ভগবান সত্যনারায়ণের পুজো বা জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের পুজো, উভয় শুভকাজেই পঞ্চামৃত দিয়ে ঈশ্বরকে অভিষেক করা হয়। এরপরে সেই প্রসাদ হিসাবে সকলের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়।
চরণামৃত কী
চরণামৃত নাম থেকে এটাও স্পষ্ট যে ভগবানের পায়ের অমৃত। এই অমৃত প্রস্তুত করতে, ভগবান শালিগ্রামকে গঙ্গার জলে স্নান করানো হয়। এর মধ্যে তুলসী ডাল ও পাতা দেওয়া হয়। স্নান করে শুদ্ধ করা পরে ভগবানের পায়ের অমৃত প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। চরণামৃত গ্রহণের কিছু নিয়ম শাস্ত্রে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী চরণামৃত গ্রহণ করতে হয়। কথিত আছে যে চরণামৃত সর্বদা ডান হাতে গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া চরণামৃত তৈরি করা সময় সর্বদা তামার পাত্র ব্যবহার করা উচিত। সম্ভবত এই কারণেই চরণামৃত সর্বদা মন্দিরে তামার পাত্রে রাখা হয়।
চরণামৃতের আক্ষরিক অর্থ হল প্রভুর পায়ের অমৃত। পূজা করার সময় তামার পাত্রে ভগবানের চরণে বিশুদ্ধ জল নিবেদন করা হয়। তাতে তুলসী পাতাও মেশানো হয়। এভাবেই তৈরি হয় চরণামৃত। তামার পাত্রে রাখা তুলসী মিশ্রিত জলে ঔষধি উপাদান থাকে, যা খেলে স্বাস্থ্যের উপতারিতাও হয়। তামার জল পাকস্থলী ও লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া তুলসীর গুণে শরীর থাকে সু্স্থ।
পঞ্চামৃতের পাঁচটি উপাদানই স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এই পাঁচটি জিনিসের মিশ্রণে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিনের মতো উপাদান। এই সমস্ত উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পঞ্চামৃত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বাড়ায়। এর নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং দুর্বলতা দূর করে।