অক্ষয় তৃতীয়ায় চন্দন উত্সব, তার ৪২ দিনের মাথায় স্নানযাত্রা (Snan Yatra)। তার ১৫দিন পরই পালিত হয় হিন্দুদের অন্যতম বিখ্যাত ও জনপ্রিয় পবিত্র উত্সব রথযাত্রা (RathaYatra)। এ বছর আগামী ১ জুলাই পালিত হবে রথযাত্রা। কথিত আছে, এই স্নানযাত্রার দিন ভগবান জগন্নাথ মর্ত্যে নেমে আসেন। সেই উপলক্ষ্যেই এই বিশেষ স্নান পর্ব চলে। করোনার কারণে গত ২ বছর রথের চাকা ঘুরলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কোভিড স্বাস্থ্যবিধি। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের (Puri Jaganath Temple) পাশাপাশি মাহেশের রথের দড়িতেও পড়বে টান। ২ বছর পর, ফের আগের মত নিয়ম মেনে রথযাত্রা পালন করা হবে। ফলে ভক্তের সমাগম যে এবার সব রেকর্ডকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
শাস্ত্র অনুসারে, স্নানযাত্রার দিন অর্থাত্ জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর যজ্ঞের প্রভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন জগন্নাথ। এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবে ধরা হয়। প্রতি বছর দেবস্নান পূর্ণিমায় স্নানযাত্রার রীতি পালিত হয়। এই স্নানযাত্রা শুরুর আগে রত্নবেদীতে থাকেন জগন্নাথ। প্রথমে জগন্নাথ, তারপর বলরাম, শেষে সুভদ্রাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। তারপরে তাঁদের নিয়ে স্নানবেদীতে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে মঙ্গল আরতি করা হয়। এবং সূর্যপুজোর পরে তিনজনকে মহাস্নানের জন্য প্রস্তুত করা হয়। স্নানযাত্রার পূর্বসন্ধ্যায় জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহ একটি বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বার করে স্নানবেদীতে এনে রাখা হয়। ভক্তেরা এই সময় জগন্নাথকে দর্শন করতে আসেন। জগন্নাথের ভক্তদের বিশ্বাস, সেদিন যদি তারা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দেবতাকে দর্শন করতে যান, তবে তাদের সকল পাপ থেকে মুক্ত হতে পারবেন। এই জন্য অসংখ্য ভক্ত স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে পুরীর মন্দির দর্শনে যান। স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে তার শুদ্ধিকরণ করা হয়। তারপর ১০৮টি কলসে সেই জল নিয়ে বিগ্রহগুলিকে স্নান করানো হয়। সেই দিন সন্ধ্যাবেলা স্নানপর্বের সমাপ্তির পর জগন্নাথ ও বলভদ্রকে গণেশের রূপে সাজানোর জন্য হস্তীমুখ-বিশিষ্ট মস্তকাবরণী পরানো হয়। জগন্নাথের এই রূপটিকে বলা হয় ‘গজবেশ’।
প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে, স্নানযাত্রার পর জগন্নাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সময় তাকে রাজবৈদ্যের চিকিৎসাধীনে গোপনে একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। জগন্নাথের এই অসুস্থতার পর্যায়টি ‘অনসর’ নামে পরিচিত। এই সময় ভক্তেরা দেবতার দর্শন পান না। তাদের দর্শনের জন্য বিগ্রহের পরিবর্তে মূল মন্দিরে তিনটি পটচিত্র রাখা হয়। এই সময় ভক্তেরা ব্রহ্মগিরিতে অলরনাথ মন্দিরে যান। তারা বিশ্বাস করেন, অনসর পর্যায়ে জগন্নাথ অলরনাথ রূপে অবস্থান করেন। কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুর্বৈদিক ‘পাঁচন’ খেয়ে এক পক্ষকালের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর ভক্তেরা আবার তাকে আবার দর্শন করতে পারেন। পাশাপাশি তাদের এই সময়ে সাধারণ খাবার দেওয়া হয়। প্রভুর স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে, তারা ১৫ দিনের জন্য ঘরবন্দি দশা কাটান। এই কারণে তিনি ভক্তদেরও দর্শন দেন। বন্ধ থাকে মন্দিরের দরজাও।
ভক্তদের বিশ্বাস অনুসারে, জগন্নাথ সুস্থ হয়ে উঠলেও শরীরকে চাঙ্গা করতে মাসির বাড়ি যান। সেই যাত্রাই রথযাত্রা হিসেবে পরিচিত। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে অর্থাৎ আগামী ১ জুলাই রথযাত্রা উত্সব পালিত হবে। মাসির বাড়ি গুন্ডিচা দেবী মন্দিরে যান সকলে মিলে। সেখানে ৭ দিন বিশ্রামের পর দশমীর দিন প্রভু মূল মন্দিরে ফিরে আসেন।