
রাবণ! নাম শুনলেই যেমন বুকের ভিতর দুন্দুভি বাজে! রামায়ণের (Ramayana) কী বিশাল এই চরিত্র যেন একার ক্যারিশমায় ঢেকে দিয়েছিলেন সকলকে। যেনে তাঁকে হত্যা না করতে পারলে নায়ক হওয়া বেশ মুশকিল ছিল পুরষোত্তম রামের (Ramchandra)! তা কথা হচ্ছে, জীবন রহস্যে ভরা। অহংকারী দশাননের অনেক গুণ ছিল কিন্তু ব্রাহ্মণ হওয়া সত্ত্বেও রাবণ কীভাবে জানলেন মায়াবী নানা মন্ত্র! তার উৎস কি ছিল তাঁর জন্মে? আসুন জেনে নেওয়া যাক রাবণের জন্ম (Ravana’s Birth) সংক্রান্ত এক মজার গল্প।
শ্রী রামচরিত মানসে রাবণের চরিত্রকে আঁকা হয়েছে প্রতীক হিসেবে। সেই রামায়ণ পড়লে বোধ হয়, রাবণের অন্যায় কর্মকাণ্ডের কারণেই তিনি এবং তার বংশ ধ্বংস হয়ে যায়। রাবণের মূর্তি আমাদের মনে শুধুই রাক্ষস হিসেবেই থেকে যায়। অথচ জানলে অবকার লাগে রাবণ ছিলেন মহাদিদেবের একজন মহান ভক্ত। পাশাপাশি তিনি ছিলেন মহান পণ্ডিত, ব্রাহ্মণ, শাস্ত্রজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাহসী যোদ্ধা এবং একজন দার্শনিক! রাবণের তিনটি গুণ ছিল— সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ। সর্বোপরি, রাবণ ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্রাহ্মণ। কিন্তু তারপরে তিনি কীভাবে রাক্ষস হয়ে গেলেন?
রাবণের জন্ম কাহিনি
বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, বিশ্রবা ছিলেন ঋষি পুলস্ত্যের পুত্র। বিশ্রবা ঋষি ছিলেন মুনিদের মধ্যে অতি শ্রদ্ধাভাজন। এহেন মহর্ষি বিশ্রবারের পুত্র ছিলেন রাবণ। পৌরাণিক যুগে মালি, সুমালি এবং মাল্যবান নামে তিনজন নির্দয় রাক্ষস ভাই ছিল। ভগবান ব্রহ্মার কাছ থেকে বলবান হওয়ার বর পেয়ে চারিদিকে তারা অত্যাচার করে বেড়াত। তাদের ত্রাস বেড়ে যাওয়ায় ঋষি ও দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে আসেন বিহিতের জন্য। শ্রী হরি অসুরদের ধ্বংস করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
শ্রী হরি যুদ্ধে মালি এবং অন্যান্য অনেক রাক্ষসকে হত্যা করেছিলেন কিন্তু সুমালি এবং মাল্যবান তাদের পরিবারসহ পাতালঘরে লুকিয়ে ছিলেন। মালি দেবতাদের জয় করার পরিকল্পনা করেছিলেন। তিনি তার কন্যা নিকষার সঙ্গে বিশ্রবা ঋষির বিবাহ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন যাতে তার একটি শক্তিশালী পুত্র জন্মগ্রহণ করে যে একজন ব্রাহ্মণ হবে এবং অসুরদের নির্দেশনায় দেবতাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করতে পারে। ক্রমে তার সেই অভিলাষ পূর্ণ হয়।
সুমালি তার কন্যা নিকষার কাছে গিয়ে তাকে বলেন যে রাক্ষস বংশের কল্যাণের জন্য আমি চাই তুমি পরম ক্ষমতাবান ঋষির কাছে গিয়ে তাকে বিয়ে করে একটি পুত্র সন্তান লাভ কর। নিকষা তার বাবার কথা শুনে ঋষি বিশ্রবার সামনে উপস্থিত হন। তাঁর রূপে মোহিত হয়ে বিশ্রবা নিকষাকে বিয়ে করতে রাজি হন।
ঋষি বিশ্রবা তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলেও তিনি বলেন, তুমি রাক্ষস বংশের হলেও আমাদের পুত্ররা ধার্মিক হবে। তারা রাক্ষস হলেও ও চেহারা ভয়ঙ্কর হলেও তারা ধার্মিক হবেন। আমার তৃতীয় পুত্র আমার মতই ধার্মিক হবে। এইভাবে একে একে রাবণ, কুম্ভকর্ণ এবং তৃতীয় পুত্র হিসেবে ধর্মাত্মা বিভীষণের জন্ম হয়। জন্ম হয় শূর্পনখারও। এইভাবেই রাবণ হয়ে ওঠেন একইসঙ্গে জ্ঞানী ব্রাহ্মণ এবং মায়াবী জ্ঞানসম্পন্ন রাক্ষস!